যশোরের শার্শার দক্ষিণ বুরুজবাগানে প্রেমিকা হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় প্রেমিক অঙ্কুরসহ ওই পরিবারের ৪ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তারের বড় ভাই আনিছুর রহমান মামলাটি দায়ের করেছেন।
হত্যাকান্ডের নায়ক প্রেমিক রুপি ঘাতক আহসান কবীর অঙ্কুর, ভাই আহসান হাবিব রোমেল ও মা হোসনে আরাকে আটক করে ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালতে প্রধান অভিযুক্ত অঙ্কুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩ টার দিকে দক্ষিণ বুরুজবাগানের আকবর আলীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তারের লাশ। জেসমিন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে। প্রেমজ সম্পর্ক ও পরে সম্পর্কের টানাপোড়েনের এক পর্যায়ে প্রেমিক রুপি সহপাঠি অঙ্কুর প্রেমিকা জেসমিনকে হত্যা করে লাশ সেপটি ট্যাংকিতে ফেলে দেয় বলে জানায় র্যাব।
র্যাব যশোরের তদন্ত, আটক ও উদ্ধার অভিযানে সপ্তাহ খানেক আগে একবার অঙ্কুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু সে সব অস্বীকার করে। পাল্টা তথ্য দেয় জেসমিনকে একজন ভারতে পাচার করেছে। এরপর অঙ্কুরের পরীক্ষার জন্য ছেড়ে দেয় র্যাব। পরে তার মোবাইল কললিস্টসহ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারিতে রাখা হয়। এসময় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যার ঘটনাটি স্বীকার করে। এরপর তাকে ঘটনাস্থল শার্শার বুরুজবাগান অঙ্কুরের বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কি থেকে জেসমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শার্শা থানায় জেসমিনের ভাই আনিছুর রহমান আটক ৩ জন ও অঙ্কুরের পলাতক বাবা আকবর আলীকে আসামি করে মামলা করেছেন।
ওই রাতেই অঙ্কুরের মা হোসনে আরা ও বড় ভাই আহসান হাবিব রোমেলকেও আটক করা হয়। অঙ্কুরসহ তার মা ও বড় ভাইকে ১১ ফেব্রƒয়ারি যশোরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। এদের মধ্যে প্রেমিক অঙ্কুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। এতে সে জেসমিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।নিহতের ভাই আনিছুর রহমান ও চাচা নুর ইসলাম জানিয়েছেন, জেসমিন যশোরের বারান্দীপাড়ায় একটি রুম নিয়ে থাকত। গত ২ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ওই রুমে যেয়ে দেখা যায় ঘর তালাবদ্ধ। পরে তারা এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন। একই সাথে র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডারের কাছেও বিষয়টি জানান। তারা জানান, অঙ্কুরের সাথে জেসমিনের প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে বিভিন্ন সময় অঙ্কুর জেসমিনকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। যা প্রায়ই জেসমিন তাদেরকে জানাতো। এরমধ্যে জেসমিন নিখোঁজ হয়। আর তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে অঙ্কুর ও তার মা, বাবা ও ভাই মিলে। তারা খুনীর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শার্শা থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত আকিকুল ইসলাম জানান, লোমহর্ষক এ ঘটনায় প্রেমি করুপি অঙ্কুরসহ ওই পরিবারের ৩ জনকে আটক করে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। একজন আটকের বাইরে আছে। তাকে খোঁজা হচ্ছে। হত্যার পেছনে আর কোনো কারণ আছে কী না খোঁজ নেয়া হচ্ছে। থানায় মামলা নাম্বার ৭। ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ ছাড়াও র্যাব সদস্যরা মাঠে রয়েছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/কেডি