করোনা সংক্রমণরোধে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যশোরের বড়বাজার থেকে কাঁচাবাজার সরিয়ে ঈদগাহ ময়দানে স্থানান্তর করা হয়েছে। শনিবার (৩ জুলাই) থেকেই ঈদগাহে এ বাজার বসার কথা। কিন্তু সেখানে যেতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। প্রতিবাদে তারা এদিন নতুন স্থানে বাজার বসায়নি। যদিও শুক্রবার রাতে ব্যবসায়ীদের সাথে প্রশাসনের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে মানুষকে ঘরে রাখতে সারাদেশের সাথে যশোরেও চলছে এক সপ্তাহের লকডাউন। তারপরেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না প্রাণঘাতী করোনার এ সংক্রমণ। বিশেষ করে যশোরের কাঁচাবাজারগুলোতে এখনো গাদাগাদি করে মানুষ মালামাল কিনছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। পাশাপাশি ক্রেতা ও বিক্রেতাকে মাস্ক ছাড়াই বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। অনেকের মাস্ক থাকলেও তারা ব্যবহারে উদাসীন ছিলেন।
এসব বিষয় বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার বড়বাজার থেকে কাঁচাবাজার সরিয়ে নেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এ কাজে গড়িমসি শুরু করে ব্যবসায়ীরা। শনিবার থেকে তাদের আর বড়বাজারে বসতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। বলা হয় ব্যবসায়ীরা শনিবার থেকেই ঈদগাহ ময়দানে দোকানদারি করবেন।
এ ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানসহ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসেন। এখানে তারা প্রশাসন ঘোষিত সময় সকাল ৯টা থেকে ১২ পর্যন্ত নয়, বেচাকেনার সময় আরো বাড়ানোর দাবি করেন। কর্মকর্তারা জানান, আগে ব্যবসায়ীরা ঈদগাহে গিয়ে ব্যবসা শুরু করুক। এরপর তাদের দাবি বিবেচনা করা হবে। এ সিদ্ধান্তে বৈঠক শেষ হয়। অথচ শনিবার ব্যবসায়ীরা নতুন স্থানে দোকান খোলেননি। পুরনো বড়বাজারেই কেউ কেউ ব্যবসা চালিয়েছেন, আবার কেউ গোটা দিনই বন্ধ রেখেছেন। এ কারণে বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে যশোর কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী নেতা সুশান্ত সাহা, শংকর সাহা, আরিফুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, জামাল হোসেন, শফিকুল ইসলাম, মনির হোসেন বলেন, অধিকাংশ ব্যবসায়ী ঈদগাহ ময়দানে যেতে চাচ্ছেন না। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলেন, সেখানে ছাউনি না থাকায় রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে তাদের বেচাকেনা করতে হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদা পানিতে পরিবেশ একাকার হয়ে যায়। সেখানে নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।
তারা বলেন, আড়ৎ থেকে পণ্য কিনে ঈদগাহে যেতেই ৯টা ১০টা বেজে যায়। বাকি দু’ঘন্টায় তাদের বেচাকেনা হবে না বলে জানান। সেক্ষেত্রে সময় বাড়ানোর দাবি জানান তারা। তারা আরো বলেন, মাছ বাজার যেখানে বড়বাজার এলাকায় থেকে যাচ্ছে, সেখানে কাঁচাবাজার ঈদগাহে গেলে তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়বে। প্রয়োজনে আগের মতই মাছবাজার টাউন হলে আনার সুপারিশ করেন তারা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, নির্দেশনা রয়েছে খোলাস্থানে বাজার স্থানান্তর করতে হবে। তারপরেও ব্যবসায়ীদের সমস্যার বিষয়টি চিন্তা করে এতোদিন তারা বিভিন্নভাবে কাচাঁবাজার বড়বাজারে রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখানে ভিড় সামলানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা ঈদগাহে গিয়ে ব্যবসা শুরু করুক। তারপর দাবির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি