স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল একটি শিশু। ওই বছরেরই ১৪ অক্টোবর ঢাকার ২৬ ইসলামপুর রোডের মিশনারিস অব চ্যারিটি থেকে ডেনমার্কের একটি পরিবার শিশুটিকে তাদের দেশে দত্তক নিয়ে যায়। ডেনমার্কে গিয়ে শিশুটি নাম পায় আশা ওয়েলিস।
এর পর কেটে গেছে দীর্ঘ ৫০ বছর। বর্তমানে ডেনমার্কেই স্বামী এবং দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে আশার সুখের সংসার। তার পরও আশা জন্মভূমি ও তাঁর ছেড়ে যাওয়া অজানা বাবা-মায়ের কথা ভুলতে পারেননি। তাদের সন্ধানে সম্প্রতি বাংলাদেশে আসেন তিনি।
বর্তমানে আশা তাঁর আসল মা-বাবার সন্ধানে খুলনার পথে পথে ঘুরছেন। গত ৩ দিন তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন কয়েকটি মন্দির, গির্জা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থানে। তবু হারানো সেই মা-বাবার পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য পাননি।
দোভাষী মোস্তফা চৌধুরীর মাধ্যমে কথা হয় আশার সঙ্গে। তিনি বলেন, জানি না কে আমার মা-বাবা বা বাংলাদেশে আমার আত্মীয়-স্বজন আছে কিনা। গত ৯ মার্চ আমি আমার স্বামী মগেনস ফল্ককে নিয়ে বাংলাদেশে আসি। প্রথমে ঢাকায় মিশনারিস অব চ্যারিটিতে যাই। সেখানে কর্মরতরা পুরানো কাগজপত্র দেখে জানান, ডলি মন্ডল নামে এক নারী আমাকে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার নির্মল হৃদয় শিশু সদনে রেখে এসেছিল। সদন থেকে আমাকে পরে ঢাকার মিশনারিস অব চ্যারিটিতে পাঠানো হয়। আমি গত বৃহস্পতিবার খুলনায় নির্মল হৃদয় শিশু সদনে গিয়ে ডলি মন্ডলের ব্যাপারে খোঁজ নেই। তারা সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে খোঁজার পরামর্শ দেয়। এরপর বাগমারা গোবিন্দ মন্দির ও শীতলাবাড়ি মন্দিরে গিয়ে খবর নিয়েছি। কেউ তেমন কোনও তথ্য দিতে পারেনি।
শনিবার আশা স্বামীকে নিয়ে ডলি মন্ডলের খোঁজে গিয়েছিলেন গণনবাবু রোডের যোসেফপাড়ায়। সেখান থেকেও ডলি মন্ডলের ব্যাপারে কোনও তথ্য মেলেনি। এক নারী বাবু খান রোডে সেন্ট যোসেফস ক্যাথিড্রালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাদের। ক্যাথিড্রালে গেলে ফাদার ও সিস্টাররা তাদের খালিশপুর নেভি গেটে খ্রিস্টান কলোনিতে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে গিয়েও ডলি মন্ডলের খোঁজ না পাওয়ায় তারা যান সিমেট্রি রোডে খিস্টান কবরস্থানে। সেখানকার কেয়ারটেকার পিটার তাদের ডলি মন্ডল নামে এক নারীর কবর দেখান। কিন্তু ডলি মন্ডলের বিস্তারিত পরিচয়ও কেউ বলতে পারেনি।
দোভাষী মোস্তফা চৌধুরী জানান, পিটার নথিপত্র দেখে এবং খোঁজখবর নিয়ে দু’এক দিনের মধ্যে ডলি মন্ডলের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা যেসব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, সেখানকার লোকজনের কাছে মোবাইল নম্বর দিয়ে এসেছি। যদি তারা কোনও তথ্য পায় তাহলে আমাদেরকে জানাবে। রোববার সকালে আশা ও তার স্বামীকে নিয়ে আমরা মোংলা হয়ে যাব সুন্দরবন। আশা ও তার স্বামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবেন।
খুলনা গেজেট/হিমালয়/এমএম