বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ নভেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে খেলাফত মজলিস। একই সঙ্গে ৮ নভেম্বর ঢাকায় ছাত্র সমাবেশ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগর আয়োজিত পদযাত্রার আগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, নাস্তিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ডাক দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের আপামর জনতা রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন তখনই আওয়ামী লীগ সরকার তাকে গ্রেফতার করে জেলে ভরে রেখেছে।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, মামুনুল হককে বছরের পর বছর বন্দি করে রাখা হতে পারে, কিন্তু তার আদর্শকে বন্দি করতে পারবে না।
তিনি বলেন, মামুনুল হকের মুক্তির আন্দোলন চলবে। মামুনুল হকের আদর্শ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তার মুক্তি হলেও আমরা সফল, না হলেও আমরা সফল। আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। মামুনুল হক এদেশের ভবিষ্যৎ নায়ক হিসেবে ফিরবেন সেই আশা করছি।
পুলিশ বাহিনীকে হুঁশিয়ারি করে তিনি বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। কোনো দলের ক্যাডার না, কোনো দলের কর্মী বাহিনী না। বিরোধী দল এদেশের নাগরিক। যারা আন্দোলন করছে, সবাই এ দেশের নাগরিক। আপনারা (পুলিশ) শপথ করেছেন, দেশের মানুষের নিরাপত্তা রক্ষা করবেন। পরিষ্কার বলছি, সরকার পরিবর্তন হবে, সরকার টিকে থাকতে পারবে না। সুতরাং প্রশাসনের ভাইদের বলবো নিরপেক্ষ হয়ে যান। বাংলাদেশে যদি চাকরি করতে হয়, তাহলে জনগণের পক্ষে থাকতে হবে। এতদিন যা করেছেন করেছেন, শেষ মুহূর্তে টার্গেট হবেন না। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে দেশের মানুষের পক্ষে থাকুন।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, আমরা সরকারকে বলতে চাই, পুলিশ প্রশাসন আপনার গোলামী করতে পারে, র্যাব আপনার গোলামী করতে পারে, আদালত আপনার গোলামী করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আপনার গোলামী করবে না। জনগণ রাস্তায় নেমে আপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মামুনুল হককে মুক্ত করবে।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জাহিদুর জামানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি পরিষদের সদস্য মাওলানা হযরত জালালী, প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা রাকিবুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস গাজীপুরের সভাপতি হাফেজ কাজী নিজামউদ্দিন প্রমুখ।
সমাবেশ শেষ নেতারা পদযাত্রা করেন। পদযাত্রাটি বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগরের দিকে যায়।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি মামুনুল হক। ঘটনার পর থেকে পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মামুনুল হক ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। ১৮ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা প্রথমে মাদ্রাসাটি ঘিরে ফেলেন। এ সময় মাদ্রাসার ভেতরে দেড় শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। পুলিশের অভিযানে প্রথমে তারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে অতিরিক্ত পুলিশ দেখে তারা হাল ছেড়ে দেন। দোতলার ওই কক্ষ থেকে মামুনুল হককে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়।
মামুনুল হককে গ্রেফতারের পর নিজ কার্যালয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের তৎকালীন ডিসি হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে সারা দেশে হেফাজতের তাণ্ডব দেখেছে সবাই। সরকারি স্থাপনাসহ থানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদপুর থানায়ও তার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের মামলা রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ