খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৩ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৬০
  জুলাই গণহত্যার বিচারে চলতি সপ্তাহে ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ, শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের বিরূদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে, তাদের ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তাও নেয়া হবে : চিফ প্রসিকিউটর
যশোরে সাংবাদিক মুকুল হত্যাবার্ষিকী মঙ্গলবার

মামলার দু’যুগ অতিবাহিত, বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন বাদী

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

আজ ৩০ আগস্ট। প্রখ্যাত সাংবাদিক যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ২৪তম হত্যাবার্ষিকী। সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল খুন হয়েছেন দুই যুগ আগে। অথচ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচার আজও হয়নি। শুধুমাত্র বিচার হয়নি বললে ভুল হবে, গত কয়েক বছর মামলাটির বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে।

দীর্ঘদিন বিচার না হওয়ায় হতাশ সাইফুল আলম মুকুলের স্বজন ও সাংবাদিক সহকর্মীরা। বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন মরহুমের স্ত্রী বাদী হাফিজা আক্তার শিরিন। পাবলিক প্রসিকিউটর এম. ইদ্রিস আলী বলেছেন, হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার না উঠানো পর্যন্ত এ মামলার কোনো আপডেট পাওয়া যাবে না।

১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল রিকশাযোগে শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এ চার্জশিট নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। এক পর্যায়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম থেমে যায় আইনি জটিলতায়।

প্রায় দুই যুগেও বিচার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশজুড়ে আলোচিত এ মামলার বাদী নিহত মুকুলের সহধর্মিণী হাফিজা আক্তার শিরিন। তিনি দুই যুগের ব্যবধানে মামলার আদ্যপান্ত ভুলতে বসেছেন। মামলার প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি কান্নাকাটি করেন। এখন আর তিনি এ মামলা নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে চান না।

এ মামলায় একজন আসামির হাইকোর্টে স্থগিত চেয়ে করা রিটের চূড়ান্ত আদেশ না আসায় যশোর স্পেশাল জেলা জজ আদালতে বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে রয়েছে। নিহতের স্বজন ও যশোরের সাংবাদিকরা অবিলম্বে মুকুল হত্যার বিচার শেষ করে আসামিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলায় একজন আসামির অংশ বাদ রেখে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। রিট হওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে চূড়ান্ত আদেশ না আসায় এ পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। হাইকোর্ট থেকে আদেশ আসলেই দ্রæত মুকুল হত্যা মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর এম. ইদ্রিস আলী।

২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর আরেক তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মওলা বক্স আরও দু’জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। ওইসময় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে দু’জনকে অব্যাহতি দেন আদালত। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আরেক সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিট আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ফারাজী আজমল হোসেনের হাইকোর্টে করা অব্যাহতির আবেদনের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয় তার আইনজীবীকে। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরেও হাইকোর্টের কোনো আদেশ যশোরের আদালতে এসে পৌঁছেনি। এসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ২৪তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে প্রেসক্লাব, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালোব্যাজ ধারণ, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এসব কর্মসূচিতে সকলকে অংশ নেয়ার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!