খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুষ্টিয়ার খোকসায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন শিশু নিহত, আহত দুই
  দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
চলতি মাসেই ২৫ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিংয়ের প্রস্তুতি

ভৈরব সেতু নির্মাণে ভাঙ্গা পড়ছে পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেডিং

একরামুল হোসেন লিপু

ভৈরব সেতুর ছাড়পত্র সংক্রান্ত জটিলতা ও ভূমি অধিগ্রহণ না হলেও চলতি মাসেই ২৫ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং এর প্রস্তুতি শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে বহু প্রত্যাশিত এই সেতু নির্মাণে ভাঙ্গা পড়ছে জাতীয় এ্যাওয়ার্ড পাওয়া কাঁচা পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেডিং হাউস লিমিটেড।

রেলিগেট ভৈরব নদী সংলগ্ন সাড়ে ১১ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেডিং হাউস লিমিটেড ২০১০ সাল থেকে বিদেশে কাঁচা পাট রপ্তানি শুরু করে। সর্বোচ্চ কাঁচা পাট রপ্তানিকারক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তিন বার জাতীয় এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৬ শত শ্রমিক কর্মরত আছেন।

খুলনাবাসীর বহু আকাঙ্খিত ভৈরব সেতুর বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) কর্তৃক সর্বশেষ সেতুর যে এলাইনমেন্ট তৈরী করা হয়েছে তাতে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়ছে বলে সওজের সার্ভেয়ার মোঃ নাইমুর ইসলাম এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার অধিকারী এ প্রতিবেদককে বলেন, ভৈরব সেতুতে মোট পিলার বসবে ৩০ টি। এরমধ্যে নদীর পশ্চিম পাশ অর্থাৎ নগরীর কুলিবাগান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে। এ অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নগরীর কুলিবাগান আকাঙ্ক্ষা পাট গোডাউনের কর্নারে। ৫ এবং ৬ নং পিলারের মাঝখান দিয়ে রেল লাইন ক্রস করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ৭ এবং ৮ নং পিলার বসবে। ৯ নং থেকে ১৩ নং এই ৫ টি পিলার বসবে ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিমিটেডের এর অভ্যন্তরে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি অনেকাংশে ভাঙ্গা পড়ছে এটা অনেকটা নিশ্চিত।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ এর ম্যানেজার (এক্সপোর্ট) পরিতোষ হালদার কানুর সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “ঢাকা ট্রেডিং হাউস লিমিটেড এর ভিতর দিয়ে ভৈরব সেতুর পিলার বসবে কিংবা প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা হবে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত নয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা এখনও পর্যন্ত কোন নোটিশ পাইনি”।

খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মিলনও ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ ভাঙ্গার বিষয়টি এ প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চত করে বলেন, আংশিক ভাঙ্গার কোন সুযোগ নেই। ভাঙলে পুরাটাই ভাঙ্গা পড়বে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে নদীর পূর্ব পাশ অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার বানিয়াঘাট ফেরীঘাট সংলগ্ন স্থান থেকে উপজেলা সদরের কাছে কুকুরমারা পর্যন্ত। নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং পিলার এবং নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এছাড়া A-1 এবং A-2 দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোন পিলার বসবে না। নেভিগেশনের জন্য অর্থাৎ সেতুর নীচ দিয়ে যাতে আনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সে জন্য মূল ব্রিজের স্লাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে। কুকুরমারা থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত এপ্রোচ রোড ৩৩ ফুট চওড়া হবে এবং সমতল ভূমি থেকে ২২ফুট স্লোপ হবে এপ্রোচ রোডে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) চলতি মাসের মধ্যে ২৫ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং এর প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অফিস বেজক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পিলারের টেস্ট পাইলিং সহ সেতুর কাজে ব্যবহারের জন্য ইকুপমেন্ট আসতে শুরু করেছে।

ভৈরব সেতুর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, গত ১০ মার্চ ছাড়পত্রের ব্যাপারে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এর সংগে আমাদের বৈঠক হয়েছে। কেডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে ‘ডিটেল এ্যাকশন প্লান’ নামে আমাদের একটি প্লান রয়েছে। প্রস্তাবিত ভৈরব সেতুর এলাইনমেন্ট এরিয়া নগরীর কুলিবাগান থেকে রেলিগেট পর্যন্ত তাদের এই প্লানের আওতাভুক্ত।

তিনি আরো বলেন, কেডিএ ছাড়পত্র না দিলেও খুলনা জেলা প্রশাসক তার বিশেষ ক্ষমতাবলে ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতি প্রদান করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভৈরব সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে আর কোন জটিলতা থাকবে না। এছাড়া চলতি মাসের মধ্যে দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ঈদগাহের ভেতর সেতুর ২৫ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিংএর কাজ শুরু হবে। এ লক্ষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রস্ততিও শুরু করেছে।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর দিঘলিয়া উপজেলাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও জমি অধিগ্রহণ এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পওয়ায় কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কাজ সেতুর কাজ শুরু করতে পারেনি।

অন্যদিকে কার্যাদেশে উল্লেখ আছে ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ ২৪ মাসের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ শত ১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ শত ৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের জন্য ২ শত ৮১ কোটি টাকা। বাকী টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ শেষ না করতে পারলে সেক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ভৈরব সেতু প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার অধিকারী।

ছাড়পত্র সংক্রান্ত জটিলতা এবং ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ার কারণে ভৈরব সেতুর কাজ শুরু হওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!