খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভাষা দিবস ‍উপলক্ষে দুই বাংলার ভাষা প্রেমীদের মিলন মেলা

বেনাপোল প্রতিনিধি

 

বেনাপোল প্রতিনিধি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বেনাপোল-পেট্রোপোল নোম্যান্সল্যান্ডে বসেছে দুই বাংলার ভাষা প্রেমীদের মিলন মেলা। দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক ভৌগলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে দুই দেশের মানুষ একই মঞ্চে তুলে ধরলেন বাংলা ভাষার জয়গান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এভাবেই কাটালেন দুই বাংলার বাংলা ভাষাপ্রেমী মানুষ।

আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালী বাংলাভাষী মানুষের পাশে। ভাষা দিবস মিলিয়ে দিলো ‘এপার-ওপার’। ভাষার টানে শহীদদের প্রতি সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানালো ভারত-বাংলাদেশ। ফুলে ফুলে ভরে গেলো সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদি।

বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হল। মিষ্টি বিতরণ, আলোচনা আর গানে গানে মাতোয়ারা হল দুই বাংলার একই আকাশ একই বাতাস।

উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কথা। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জড়ো হয়েছিল দু-দেশের হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো স্বতস্ফুর্ত অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। দুই দেশের জাতীয় পতাকা, নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা। দুই বাংলার মানুষের এ মিলন মেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি হয়। প্রতি বছরই দুই বাংলার সীমান্তবর্তী এ অংশের বাসিন্দারা এক সঙ্গে মিলিত হয়ে দিবসটি মনের মাধুরি দিয়ে পালন করেন। তখন দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ওই স্থানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সকল ভেদাভেদ যেন ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য।

ফুলের মালা, মিষ্টি ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ। বাঙালীর নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। দুই বাংলার মানুষের মাঝে বসে এক মিলন মেলা। এ সময় পেট্রাপোল-বেনাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।

মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতি প্রিয় মল্লিক, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বিধায়ক শ্রীমতি বীনা মন্ডল, বনগাও পৌরপ্রধান শ্রী গোপাল শেড, সাবেক সাংসদ মমতা ঠাকুরের নেতৃত্বে ভারত থেকে আসা শতশত বাংলা ভাষী মানুষ বাংলাদেশিদের ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেয় একে অপরকে। নোমান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্য, বিশেষ অতিথি ৮৫ যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, কাস্টমস কমিশনার আব্দুল হাকিম , জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আহমেদ হাসান জামিল,২১ উদযাপন কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু ও সচিব শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল।

ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বনগাও পৌর সভার মেয়র শংকর আঢ্য, উওর ২৪ পরগনা জেলার মেন্টর গোপাল শেড সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অংশ নেয়। দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে। এসময় ভাষার টানে বাঙালির বাঁধন হারা আবেগের কাছে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। উভয় দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি এখনও যে অটুট রয়েছে তাই বোঝা গেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই বাংলার অতিথিদের বক্তব্যে। এরপর ভারতীয় মন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশের চেকপোস্টের মঞ্চে।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বক্তারা বলেন, এদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র বিকশিত হতে শুরু করেছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ আজ মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। দুই দেশের নেতৃত্বে এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা হবে। তাদের ভাষা ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের দুই দেশের মধ্যে উপস্থিত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিতকে আরো শক্ত করবে।

পৌর সভার মেয়র গোপাল শেড বলেন, আপনারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ভাষা আর স্বাধীনতার জন্য এতো ত্যাগের নজির পৃথিবীতে অন্য কারও নেই। এ জন্য আপনারা গর্বিত জাতি। ভাষার টানে আমরা বাংলাদেশে ছুটে এসেছি একুশ উদযাপন করতে। দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলার মধ্যদিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। আমার এসেছি অন্তরের টানে। বার বার ছুটে আসি। দেশ বিভক্তি হলেও ভাষার পরিবর্তন হয়নি। আমরা ওপারে থাকলেও শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। একুশের মঞ্চে কবিতা আবৃতি, ছড়া, গীতিনাট্য, আলোচনা আর সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দুই বাংলার নামি-দামি শিল্পীরা ২১ এর সংগীত পরিবেশন ও আবৃতি করেন। ভাষা শহীদদের স্মরণে দুই বাংলার মানুষের সম্প্রতি আর ভালোবাসার বাধনকে আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয় ভাষা প্রেমিদের মিলন মেলা। সমগ্র অনুষ্ঠানে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় দুই সীমান্তে। বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য

বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে দুই সীমান্তে। সীমান্ত টপকে যাতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ বাঁশের বেষ্টনি দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

২০০২ সাল থেকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টের নোমান্সল্যান্ডে মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে দুই বাংলার ভাষাপ্রেমী
মানুষ।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপনভট্রাচার্য্য বলেন, ৫২ এর ভাষা সংগ্রামের পথ ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জনগণ ও সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক, নাড়ির সম্পর্ক। সে জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে আমাদের এই ভাষা আন্দোলন।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!