পাইকারী ও খুচরা বাজারে বেগুনের দামের পার্থক্য ২৫ টাকা। খুচরা বাজারে সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও পাইকারী বাজারে এর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রমজান এলেই প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। গত দু’দিন ধরে বেগুন সংকটের কথা জানিয়ে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে কোন সংকট দেখা যায়নি।
সোনাডাঙ্গাস্থ কাঁচা বাজারের আতিক বাণিজ্য ভান্ডারের হিসাব রক্ষক হাসান মাহমুদ জানান, গত তিন দিন ধরে বেগুনের দাম উর্ধ্বমুখী। বাজারে এ পণ্যটির সংকট চলছে। গাছের বয়স বেশী হলে এর উৎপাদন কমে যায়। তাছাড়া যশোরের মনিরামপুরে এর আবাদ হয় সবচেয়ে বেশী। ওখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয় বেগুন। চাহিদার তুলনায় স্বল্প সরবরাহের কারণে দেশব্যাপী এ পণ্যটির দাম বেড়েছে। রমজান এলেই কেন বেগুনের সংকট হয় ? কারণ জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। যদিও উক্ত ব্যবসায়ীর বক্তব্যের সাথে বাজারে সরবরাহের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
ওই বাজারের অপর ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, ‘দু’দিন আগেও বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু হঠাৎ বেগুনের দাম উর্ধ্বমুখি হওয়ার কারণ তিনি জানেন না। তবে শুক্র ও শনিবার তিনি এ পণ্যটি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। চাষীরা বেগুনের দাম বাড়িয়েছে তাই তাকে এ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিদিন পাঁচ ট্রাক আসলেও বর্তমানে আসছে দু’ট্রাক।’ অথচ তার ঘরেই কয়েক বস্তা বেগুন দেখা যায়।
একই বাজারের ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, বাজারে কোন পণ্যের সংকট নেই। রমজান এলেই মানুষ অধিক কেনাকাটা করে। আর এ সুযোগ গ্রহণ করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তারা এক টাকার মাল ১০ টাকায় বিক্রি করতে কোন দ্বিধাবোধ করেনা। তাই মূল্য বৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের অধিক কেনাকাটার অভ্যাসকে দায়ী করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডুমুরিয়ার এক চাষী বলেন, এবার বেগুনের ফলন বিগত বছরের তুলনা বেশ ভাল। বেগুনের কোন সংকট নেই। ব্যাপারী তার কাছ থেকে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় ক্রয় করছেন। ৮০ টাকা দাম শুনে তিনি বলেন, এভাবে তারা আমাদের বঞ্চিত করছে।
নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের কাঁচা মাল বিক্রেতা মো: ছগির হোসেন বলেন, আজও তিনি ৮০ টাকায় বেগুন বিক্রি করছেন। পাইকারী বাজার থেকে খুচরা বাজারের পার্থক্য জানতে তিনি বলেন, সেখান থেকে ৬২ টাকায় বেগুন ক্রয় করতে হয়েছে। প্রতিকেজি আড়ৎ ভাড়া বাবদ তাদের দু’টাকা দিতে হয়। এরপর আছে লেবার ও পরিবহন খরচ। তারপর আছে দোকান ভাড়া ও বিদ্যুৎ খরচ। সবমিলিয়ে এ দরের থেকে কম দমে বিক্রি করলে তার অনেক লস হবে। যদিও তিনি বলেছেন, দু’দিনের মধ্যে এ পণ্যটির দাম হাতের নাগালে চলে আসবে।
ট্রাক টার্মিনালে কথা হয় শরীফুল ইসলামের সাথে। তিনি ফায়ার সার্ভিস খুলনা অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন। সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে তিনি এখানে আসেন। বাজারের পণ্যর দাম শুনে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা জানিয়ে জিনিষের দাম বাড়ালেও বাজারে কোন পণ্যের সংকট নেই। রমজান এলেই ব্যবসায়ীর অধিক মুনাফা লাভের আশায় প্রতিযোগীতায় নামে। আর এ প্রতিযোগীতার হিসেবে পড়ে আমাদের পকেট কাটা যায়। ব্যবসায়ীরা একের পর এক সিন্ডিকেটি করে বাজারের পণ্যর দাম বাড়ালেও এটি দেখার কেউ নেই। বাজার তদারকি সংস্থার গাফিলতির কারণে ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই