খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত
  জুলাই গণহত্যা : ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ
কবে নিজের ভিটায় ফিরতে পারবে জানে না তারা

বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন কয়রার মানুষ

মেহেদী হাসান বাপ্পী

মানুষের জীবন নদীর মতো, কখনো জোয়ার আর কখনো ভাটা আসে। তবে খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের জীবনে ভাটা চলছে দীর্ঘ সাত মাস ধরে। বেড়িবাঁধের উপর কুড়ে ঘর বানিয়ে চলছে সংসার। রয়েছে খাবার আর নিরাপদ পানির সংকট। শীতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো প্রস্তুতিও নেই অধিকাংশের।

গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানে বাংলাদেশ উপকূলে। আম্ফানে খুলনা উপকূলে প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা উপজেলার ১০ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে এসময় তলিয়ে যায় উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাশিরহাটখোলা, গাজীপাড়া, কাটকাটা, হাজতখালী, কাঠমারচর গ্রামের শত শত পরিবারের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মাছের ঘের। বিপর্যয় নেমে আসে মানুষের জীবনে। বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলো ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করছে জীবনের সাথে।

আম্ফানের পর ৭ মাস অতিবাহিত হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা। কাশিরহাট খোলা গ্রামের সাত্তার বিশ্বাস ছিলেন ঘেরের মালিক। বাঁধ ভেঙে তার ঘের ডুবেছে, কয়েক লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এখন তিনি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন ।

একই গ্রামের রাধা রানী দাস বলেন, “জোয়ার আসলে চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ভাটায় পানি একটু কমলেও ঘরে ফেরা যায় না। পরিদর্শনে এসে সবাই শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। জানিনা কবে নিজের ভিটায় ফিরতে পারবো।”

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এসব মানুষের জীবনে নতুন উপদ্রব হয়ে এসেছে শীত। সহায়সম্বলহীন মানুষগুলোর নেই পর্যাপ্ত শীতের কাপড়। দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাঁধের উপর খুপড়ি ঘরে দিনপার করলেও শীতের কাছে এখন তারা কুপোকাত।

দিনমজুর মান্নান বলেন, “শীতে আমাগে বাচ্চাপুলাপানের খুব কষ্ট হয়। আমরা না পাই বাচ্চাগুলোর জন্য অন্তত শীতের কিছু গরম কাপড় দিক সরকার। বউ বাচ্চা নিয়ে আমরা বাঁইচে থাকতি চাই।”

তাদের এমন দুঃসময়ে পাশে দাড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো। সম্প্রতি রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব খুলনা ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের ৪০০ পরিবারের মাঝে কম্বল, সোয়েটার, বিনামূল্যে ঔষধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়।

বর্তমানে কয়রায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কোরের সদস্যরা দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালি, সদর ইউনিয়নের হরিণ খোলা ও উত্তর বেদকাশির রতনাঘেরি কাটকাটা এলাকায় বাধঁ পুণঃনির্মানের কাজ করছে। তাইতো দুর্ভোগে পড়া সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!