অভয়নগরে ভারি বর্ষণে পানির নিচে নওয়াপাড়া পৌর ও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম। রবিবার রাত আনুমানিক ৯টা থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হয়ে চলতে থাকে প্রায় ২টা পর্যন্ত। এতে রাতের আঁধারেই তলিয়ে যায় উপজেলার ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদসহ রাস্তাঘাট। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার জনগণকে ডুবে থাকতে হবে প্রায় ২মাস।
এদিকে শিক্ষার্থীরা পড়েছে আবারও বিপাকে, যেতে পারছেনা তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তৈরী করেছে বাঁশের সাঁকো। মন্দিরে যেতে পারছেনা ভক্তরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটি (দক্ষিণ) গ্রামের মানুষের। এখানকার প্রায় সকল বাড়ি-ঘর জলের নিচে। তাদের বাস করতে হচ্ছে ব্যাঙ আর সাপের সাথে। ভবদহ ও আমডাঙ্গা খাল দিয়ে পর্যাপ্ত জল যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় এবং জল বেড়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়ছে মাটির তৈরী ঘরগুলো। ভেসে গেছে এলাকার প্রায় সকল মাছের ঘের। ফলে ক্ষতির সম্মুখিন এলাকার ঘের ব্যবসায়ীরা।
এছাড়াও টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নওয়াপাড়াবাসী। নষ্ট হয়েছে কাঁচাবাড়িসহ ফসলাদি। মানুষের দৈনিন্দন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, নওয়াপাড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে আংশিক বাড়ি-ঘর, রাস্তা স্কুল-কলেজ, পাঁকা ও কাঁচা ধান, সবজিসহ ফসলাদির ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওয়াপাড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের বাড়ি-ঘর পানিবন্দি হয়ে গেছে। ওই ওয়ার্ডের বিলে পাঁকা ধান ডুবে গেছে, অনেক লাস্ট আউস ধান কাটা ছিল তা ভেসেগেছে। আবার সদ্য রোপনকৃত বর্ষা মৌসুমের (আমন) ধান ডুবে গেছে। নওয়াপাড়া মহিলা কলেজ, নওয়াপাড়া পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও নওয়াপাড়া কলেজ মাঠে হাঁটু পানি জমে আছে।
কৃষক রহিম জানায়, ‘অনেক কষ্ট করে ধার দেনা করে আমন ধান রোপন করেছিলাম, কিন্তু টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তা ডুবে গেছে। যদি খুব তাড়াতাড়ি এ ওয়ার্ড থেকে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হলে ধানের কোন ক্ষতি হবেনা।’
৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আঙ্গিনায় হাটু পানি, যেকারণে রোগীদের যাতায়াত করতে দারুন কষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয় ৫নং ওয়ার্ডে প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ি জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। অধিকাংশ স্কুল-কলেজ জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। এব্যাপারে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার বাড়ি সহ অনেকের ঘরে পানি জমে আছে। আমার অনেক পেঁপে গাছের ক্ষতি হয়েছে। এ ওয়ার্ডে অধিকাংশ রাস্তা ডুবে গেছে যে কারণে মানুষের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। জুতা না খুললে রাস্তায় যাতায়াত করা যাচ্ছেনা ‘
৪নং ওয়ার্ডের নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে পানি, বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু পানি। ওই এলাকার অনেক বাড়ি জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। নওয়াপাড়া হিজবুল্লাহ মাদ্রাসায় হাঁটু পানি জমে আছে। নওয়াপাড়া মডেল কলেজ রোডসহ ওই এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ি জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
৭নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের বাড়িসহ স্কুল, কলেজ জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। দূর্গাপুর সিরাজকাটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি। ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে।
৮নং ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ বাড়ি ও রাস্তা জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। ১নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় এ ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েগেছে। ১০ শতাংশ রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ঘের ব্যবসায়ী ইউসুফ শেখ বলেন, ‘আমার ৪ বিঘা একটি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘের থেকে সব মাছ বের হয়েগেছে । ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার মত।’
শফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, ‘এ ওয়ার্ডে পানি দ্রুত নিষ্কাশন না করা হলে পানিবাহিত রোগসহ বাড়ি-ঘর ও ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য সুন্দলী এলাকার সকল মহল থেকে ৮৮ যশোর ৪ এর সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম সামদানী বলেন, ‘নওয়াপাড়া পৌরসভা ও উপজেলার প্রায় সব জায়গায় পানি আমরা লক্ষ্য করেছি।’ ফসলাদির কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা আমরা এখনো নিরুপণ করতে পারিনি। তবে তদন্ত করে দেখছি। জানানো হবে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই