২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জনপ্রশাসন খাতে বেশি বরাদ্দ রাখার সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসন খাতে। জনপ্রশাসন কী? পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি, ইউএনও। তাদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। জনগণের পকেট কেটে তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (১০ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
সমাবেশে বক্তব্য চলাকালীন দলীয় নেতাকর্মীদের স্লোগান দেওয়া নিয়ে বরাবরের মতো আজও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল। নিজের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, দয়া করে কেউ স্লোগান দেবেন না। তারপরও নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন। তখন তিনি কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি, দয়া করে এখন স্লোগান দেওয়া বন্ধ করুন। আহ্বান জানাচ্ছি একটু স্লোগান বন্ধ করেন।’
এর কিছুক্ষণ পর আবার নেতাকর্মীরা স্লোগান দেওয়া শুরু করলে উত্তেজিত বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আবার! কিরে ভাই, তোমরা কারও কথা শুনো না কেন? আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, একজন বৃদ্ধ মানুষ…।’
পরে বাজেট প্রসঙ্গে মহাসচিব বলেন, ‘এই বাজেট কাদের সাহায্য করেছে? যারা চুরি, ডাকাতি, লুণ্ঠন করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে তাদের জন্য। তারা এখন মাত্র ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে টাকা ফেরত আনতে পারবে। কেউ এই নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না। দুদক ধরবে না, হাইকোর্ট থেকেও তাদের কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। যারা এই বাজেট দিয়েছে, তারা কি এই সাধারণ মানুষের সরকার? চোর, ডাকাত, লুটেরাদের সরকার।’
মানুষের প্রতি এই সরকারের কোনো ভালোবাসা নেই- দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কাল একটা বাজেট দিয়েছে। কারা এই বাজেট দিয়েছে? আজকের এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। জনগণের বাজেট দেওয়ার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে তারা প্রমাণ করেছে, তারা বাংলাদেশের মানুষের শত্রু। এরা এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তো বাজেটের তেমন কিছুই বুঝি না। সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখি, কোন জিনিসের দাম বাড়ল আর কোনটির কমল। আজ গ্যাসের দাম বেড়েছে, সারের কারখানার…বাড়বে। অর্থাৎ যারা কৃষিকাজ করেন, তাদের সারের দাম তিনগুণ বাড়বে। আবার বলেছে- শিল্প কারখানায় যে গ্যাস ব্যবহার হয়, তার দামও বাড়বে। তাহলে প্রতিটি জিনিসের দামই বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি হালকা করে দেখবেন না। এই দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এতোটুকুও বৃদ্ধি পায়নি। আওয়ামী লীগ এতো বড়-বড় কথা বলে, মানুষের আয় বাড়বে, জিডিপি বাড়ছে। কই, কারও উন্নতি হয়েছে?
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
সভা-সমাবেশে পুলিশকে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা আশা করব, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আওয়ামী লীগকে যেমন মিটিং-মিছিল করতে দেন, আমাদেরও দিতে হবে। সেখানে বাধা দিলে জনগণ তা মানবে না। বিনা কারণে মানুষকে তুলে নিয়ে অত্যাচার করবেন না। এজন্য একদিন না একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
সমাবেশে সভাপত্বি করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মঞ্জু ও আমিনুল হক। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ।