খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভিসা আবেদনের জন্য মার্কিন দূতাবাসে গেছেন খালেদা জিয়া
  ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশে এমন উন্মাদনা দেখতে চাই না : মির্জা ফখরুল

বছর শেষে আলোচনায় ছিল মরিয়ম মান্নান !

সাগর জাহিদুল

স্মৃতির পাতা থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে আরও একটি বছর। নানা ঘটনা দিয়ে পার হতে চলেছে ২০২২। বিদায়ী বছরে সবচেয়ে আলোচিত ছিল একটি অপহরণ ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা। মাকে ফিরে পেতে মেয়ে মরিয়ম মান্নানের কান্না অশ্রুশিক্ত করেছিল সব শ্রেণির মানুষকে। পরে জানা গেল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে এটি ছিল পারিবারিক নাটক। পুলিশ ও পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে আসল ঘটনা। সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে।সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ ফেসবুকসহ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে ছিল মরিয়ম মান্নান।

বিদায়ী বছরের ২৭ আগস্ট রাত ১০ টায় নগরীর দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাসার উঠানের নলকূপ থেকে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম। এ ঘটনায় রহিমা বেগমের ছেলে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে তারা মায়ের সন্ধান চেয়ে সন্তানের পোষ্টার, লিফলেট, মাইকিং ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। মায়ের সন্ধান দাবিতে এক কর্মসূচিতে মরিয়ম মান্নানের কান্নার ছবি দেখে তার পক্ষে স্বোচ্ছার হয়েছিলেন অনেকেই।

অপহরণের দু’দিন পর কয়েকজন আসামির নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় রহিমা খাতুনের ছোট মেয়ে আদুরী বেগম মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন রহিমা বেগমের বর্তমান স্বামী বেলাল, প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম পলাশ, মো: মহিউদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, জুয়েলসহ আরও কয়েকজন।

এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বাওলা ইউনিয়নের বাওলা পূর্বপাড়া বাওলা গ্রামের একটি কবরস্থানে বস্তাবন্দি লাশের সন্ধান মেলে। লাশের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান মরিয়ম মান্নান। উদ্ধার হওয়া ওই লাশের আলামত গুলো দেখে তিনি দাবি করেন এরকম পোষাক তার মা পরতেন। সেখানেও আলোচনার জন্ম দেন মরিয়ম মান্নান। তার দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ আদালতে ডিএনএ টেষ্টের জন্য আবেদন করে থানা পুলিশ। কিন্তু ওই দিন শুক্রবার থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

রহিমা বেগমের অপহরণের বিষয়টি দেশ জুড়ে আলোচনার জন্ম নিলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তাদের চলাফেরার ওপর নজরদারি করতে থাকে দৌলতপুর থানার পুলিশ।

এর আগে দৌলতপুর থানা থেকে তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয় আদালতের মাধ্যমে। অবশেষে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয় দৌলতপুর থানা পুলিশ। পুলিশ অপহৃত রহিমা বেগমকে ওই দিন রাতে ফরিদপুর জেলার সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়ার পর দৌলতপুর থানা পুলিশ তাকে জিম্মায় নেয়। রাতে উপস্থিত সাংবাদিকদের থানার ওসি বলেন, রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।

উদ্ধার হওয়ার পরেরদিন দৌলতপুর থানা তাকে খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে হস্তান্তর করে। ওই দিন সংবাদ সম্মেলনের পর আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরে তাকে ছোট মেয়ে আদুরীর জিম্মায় ছেড়ে দেন আদালত।

মরিয়ম মান্নানের অপহরণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি মহিউদ্দিন বলেন, জমির সীমানা নিয়ে এলাকার পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফের সাথে রহিমা বেগমদের বিরোধ ছিল। এছাড়া আমার ছোট ভাই কিবরিয়ার জমি তাদের সীমানা লাগোয়া তাই আমাদের এ মামলায় ফাঁসিয়েছে তারা। তাছাড়া তিনি এলাকার বহু মানুষকে এর আগে এমনভাবে ফাঁসিয়েছে। সম্মানের দিকে তাকিয়ে সকলে তাদের সাথে আপোষ করে নেয়। এর আগেও আমাদের নামে দ্রুত বিচার আইনে মিথ্যা মামলা করেছিল তারা। কিন্তু পিবিআইয়ের সঠিক তদন্তে সে যাত্রায় আমরা রক্ষা পেয়েছিলাম। এবারও পিবিআই তদন্ত করে সঠিক রির্পোট দিবে। মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে একমাস একদিন জেল খেটেছি। আমার সন্তানেরা রাস্তায় বের হতে পারেনি। মরিয়ম মান্নান ও তার পরিবার দেশের কোটি কোটি মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করেছে। পিবিআই ফাইনাল রির্পোট দিলে আমরা আদালতে মানহানি মামলা করব।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক পিবিআই মো: আ: মান্নান খুলনা গেজেটকে বলেন, রহিমা খাতুন এর আগে বহু বার বাড়ি থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে গিয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এটি ছিল তাদের সাজানো নাটক। মামলায় বর্ণনায় তারা যা লিখেছিলেন সেটি সত্য নয়। অপহরণের বিষয়ে রহিমা বেগম তাদের জানিয়েছেন, সংসার, ছেলে মেয়ে ও জমি জামা তার ভাল লাগত না। তাই তিনি আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। খুব শিগগিরি এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!