খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

ফাইনালে ভারতের সামনে আজ ‘ফেভারিট’ শ্রীলঙ্কা

স্পোর্টস ডেস্ক

প্যাভিলিয়নের সামনে টিম বাস চলে এসেছে এবং ক্রিকেটাররা হোটেলে ফেরার জন্য ড্রেসিংরুম থেকে নেমে এসেছেন, কিন্তু দাসুন শানাকারা কিছুতেই আর বের হতে পারেন না। বের হওয়ার পথই যে বন্ধ করে রেখেছিল শ্রীলঙ্কান দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের কান ফাটানো বাদ্য-বাজনায় গভীর রাতেও কেঁপে উঠছিল দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

ফাইনালশিরোপার রঙে রাঙা আমুদে লঙ্কান দর্শকদের উন্মাদনার এই ছবিটা ঠিক এক বছর আগের।

এই সেপ্টেম্বরেই হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ শুরু করা শানাকারা সেবার ঘুরে দাঁড়ানোর এক অবিশ্বাস্য গল্পের নায়ক বনে যান একেকজন। দর্শকরা শেষ পর্যন্ত তাদের ‘মিউজিক্যাল স্যালুট’ দিতে দিতে বাসে ওঠার পথ করে দেয়। ভিনদেশে ওরকম বীরোচিত সংবর্ধনা পাওয়া লঙ্কান ক্রিকেটারদের জন্য আজ নিজেদের মাঠে কী অপেক্ষা করে থাকতে পারে, তা আর না বললেও চলছে। রাতের প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ট্রফিটা হাতে তুলে ধরার বন্দোবস্ত করলেই হবে!
সেটি এত সহজও নয়! বিশ্বকাপের ঠিক আগে ওয়ানডে সংস্করণের এই এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভারত বলেই চ্যালেঞ্জটি আরো বেশি।

সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বিরাট কোহলি, হার্দিক পাণ্ডে ও জসপ্রিত বুমরাহদের বিশ্রাম দিয়ে নামা ভারত বাংলাদেশের কাছে হারলেও ফাইনালে পুরো শক্তির দল নিয়েই ফিরছে। ফিরছে শিরোপার জন্য। ক্রিকেটীয় বিবেচনায় নিঃসন্দেহে ফেভারিট তারাই। কিন্তু গতকাল বিকেলে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য জানাচ্ছে, মাঠের লড়াইয়ের আগেই একটি ক্ষেত্রে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে স্বাগতিকরা।

সশরীরে টিকিট কেনার জন্য যে বুথ খোলা হয়েছিল, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ সাধারণ দর্শকদের সংরক্ষিত আসনের সব টিকিটই এরই মধ্যে ‘সোল্ড আউট’। কিছু টিকিট তার পরও অবশিষ্ট আছে, তবে সেগুলো গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড এবং হসপিটালিটি বক্সের। তা-ও মাত্র ১০০টি টিকিট। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেগুলো এখন বাড়তি মূল্যে বিক্রি করার ঘোষণা এসেছে এসএলসির সেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

অথচ একই আসরে এমনকি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেও গ্যালারির অনেকটা ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে যেখানে, সেখানে ফাইনালে স্বাগতিকদের উপস্থিতি তিল ধারণের ঠাঁইও রাখেনি।

ভারতের বিপক্ষে তাই মাঠে আজ ১১ জন লঙ্কান ক্রিকেটারই লড়বেন না, লড়াইয়ে তাঁদের সংগত দিতে থাকবে গোটা স্টেডিয়াম। গতকাল দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে দর্শক টানার ক্ষেত্রে নিজেদের কৃতিত্বও দাবি করতে শোনা গেল লঙ্কান অধিনায়ক শানাকাকে, ‘আমাদের ঘিরে গত কয়েক বছরে দর্শকদের কাণ্ডকারখানা অসাধারণ। তবে আমাদের পারফরমাররাও পারফরম্যান্স দিয়ে খেলাটিকে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বিশেষ করে তরুণরা।’ এঁদের মধ্যে বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে সুপার ফোরের ম্যাচে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে হারিয়েই দিচ্ছিলেন প্রায়। ফাস্ট বোলার মাথিশা পাথিরানাও তাঁর বিচিত্র বোলিং অ্যাকশন এবং পারফরম্যান্স দিয়ে দলের ভরসা হয়ে উঠেছেন। এর সঙ্গে চারিথ আসালঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমাদের ব্যাটিং যোগ হয়ে টানা দুই এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কা।

যাঁরা এবারও আয়োজক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) স্বপ্ন চূর্ণ করেছেন। তাঁরা গ্রুপিং এবং সূচিই এমনভাবে করেন যাতে আসরে তিন-তিনবার দেখা হয় ভারত-পাকিস্তানের। তৃতীয় দেখাটা ফাইনালে হওয়ার কথা থাকলেও কোনোবারই তা হয় না। আজ ১৬তম এশিয়া কাপের ফাইনাল। অথচ একবারও শিরোপার লড়াইয়ে দেখা হয়নি এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর। এবার সেই সম্ভাবনার খুব কাছাকাছি থাকা পাকিস্তানকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কাই উঠে এসে দাঁড়ায় আরেক শিরোপার মঞ্চে।

ফাইনালে এর আগেও সাতবার দেখা হয়েছে ভারত-শ্রীলঙ্কার। ব্যবধানও কাছাকাছিই। ভারত এগিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে। আজ শিরোপা সংখ্যায়ও রোহিত শর্মাদের ধরে ফেলার সুযোগ স্বাগতিকদের। আগের ১৫ আসরের মধ্যে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাতবার, লঙ্কানরা ছয়বার। সমান সমান হওয়ার লড়াইয়ের আগে অবশ্য মাহিশ থিকশানাকে হারিয়ে বসে আছে লঙ্কানরা। চোটের জন্য ফাইনালে খেলতে পারবেন না এই রহস্য স্পিনার। বাংলাদেশ ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় চোট পাওয়া অক্ষর প্যাটেলকে হারিয়েছে গতকাল পুরো দিন বিশ্রামে পার করা ভারতীয় শিবির। তাঁর জায়গায় গতকাল ঝটপট এসে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর। লোয়ার অর্ডারে নেমে যাঁর ব্যাটও কথা বলতে জানে, বাংলাদেশের বিপক্ষে যেভাবে কথা বলছিল অক্ষরের ব্যাট।

প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেটের যা চরিত্র, তাতে শেষের দিকে ব্যাটারদের কাছ থেকেও রানের চাহিদা প্রতিটি দলের। বিশেষ করে রাতে বল ব্যাটে আসে আরো দেরিতে। এমন উইকেটে স্পিনাররা কতটা ভয়ংকর উঠতে পারেন, গত কয়েকটি ম্যাচই তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। শানাকাও যেন শিরোপা ভাগ্য অনেকটা ছেড়ে দিলেন উইকেটের ওপর, ‘আমরা প্রস্তুত। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে উইকেটের ওপর। এই টুর্নামেন্টে উইকেট খুব বড় ভূমিকা রেখে আসছে। এমন উইকেটে দ্রুত ভারতের কিছু উইকেট তুলে নিতে পারলে খেলায় আমাদের দরজা খুলে যাবে।’

সেই দরজা খোলার জন্য লঙ্কান সাজসজ্জা কেমন হবে, সেটি তো জানাই। থিকশানা না থাকলেও স্পিনাররাই হবেন ভরসা। হয়তো হবেন রাতের কলম্বোয় আরেকটি উৎসবের মধ্যমণিও!

 

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!