খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
  আইপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ঋষভ পন্ত

প্রথম দিন শেষে চালকের আসনে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের ঘূর্ণিজাদুতে অল্প রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বোলিংয়ে এসে সেই ঘূর্ণিতে কিউই শিবিরে তাণ্ডব চালিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামরা। এতে প্রথম দিন শেষে চালকের আসনেই আছে টাইগাররা।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭২ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। এ ছাড়া তরুণ ব্যাটার শাহাদাত হোসেন দীপুর ব্যাট থেকে আসে ৩১ রান।

এরপর নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামার পর শুরুতে দেখেশুনে খেললেও দলীয় ৪৬ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে। এরপর কিউইরা ৫৫ রানে ব্যাট করার সময় আলোক স্বল্পতার কারণে প্রথম দিনের খেলা ইতি টানেন আম্পায়াররা। দিনশেষে বাংলাদেশের চেয়ে ১১৭ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা।

বাংলাদেশের বোলারদের সামকে বেশ সাবলীল শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও টম ল্যাথাম। তবে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মিরাজের হাত ধরে প্রথম সাফল্য পায় টাইগাররা। তার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি ঠিক বুঝতে না পেরে ছেড়ে দেন কনওয়ে। আর তাতেই বল সোজা গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে সমান ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান করেন কিউই ওপেনার।

মিরাজের পর উইকেট শিকারের মিছিলে যোগ দেন সিলেট টেস্টের নায়ক তাইজুল ইসলাম। পরপর দুই ওভারে তিনিও তুলে নেন দুই উইকেট। সপ্তম ওভারে তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারি ল্যাথামের ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। সেখানে দারুণ ক্যাচ তালুবন্দি করেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। এতে ২০ বলে মাত্র ৪ রানেই থামে তার ইনিংস।

এরপর নবম ওভারে দলীয় ৩০ রানের মাথায় সফরকারীদের বিপদ বাড়িয়ে সাজঘরে ফেরেন হেনরি নিকোলস। তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়েছিলেন নিকোলস। ঠিকঠাক ব্যাটে সংযোগ করতে পারেননি। মিড অনে দারুণ ক্যাচ নেন শরিফুল ইসলাম। মাত্র ১ রানেই ফেরেন কিউই এই ব্যাটার।

এরপর দিনটা পুরোপুরি বাংলাদেশের করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বলে কেইন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন শর্ট লেগে দাঁড়ানো শাহাদাৎ হোসেন দীপু। বিদায়ের আগে ১৪ বলে ১৩ রান করেন তারকা এই ব্যাটসম্যান। একই ওভারে মিরাজ এলবিডব্লিউ করেন টম ব্লান্ডেলকে। এতে শূন্য হাতেই বিদায় নেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার।

১২.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৫৫ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। এখনও পিছিয়ে আছে ১১৭ রানে। মিরাজ ৩টি ও তাইজুল পেয়েছেন দুই উইকেট।

মিরপুরে প্রথম দিনে বোলাররা ১৫ উইকেট নেন। আলোক স্বল্পতায় এদিন খেলা শেষ হয় দ্রুত। তবে আগামী কয়েক দিনও যে ব্যাটারদের কঠিন সময় পার করতে হবে এখানে, তার পূর্ভাবাস পাওয়া হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে।

এর আগে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দিন থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে মিরপুরে। ম্যাচের দিন সকালটাও ছিল মেঘাচ্ছন্ন। এর মধ্যে শান্তর ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত কিছুটা সাহসীই বলতে হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসানকে কঠিন সময় কাটাতে হয়েছে।

টিম সাউদি ও কাইল জেমিসনের বলে সুইংও ছিল বেশ। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারেই স্পিনার নিয়ে আসেন কিউই অধিনায়ক। এরপরও কিছুটা সময় বেশ ভালোভাবেই খেলছিলেন দুই ওপেনার। ১০ম ওভারে গিয়ে স্পিনার দিয়েই কাজ হয়। এ ম্যাচে একাদশে ঢোকা মিচেল স্যান্টনার প্রথম উইকেট এনে দেন নিউজিল্যান্ডকে। তাতে অবশ্য ব্যাটার জাকিরের দায়ই বেশি। স্যান্টনারকে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে দাঁড়ানো উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ২৪ বলে ৮ রান আসে তার ব্যাটে।

২৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর আর এক রানও যোগ করতে পারেনি তৃতীয় উইকেট জুটি। শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে এবার ফেরেন আরেক ওপেনার জয়। ৪০ বলে ১৪ রান করা এই ব্যাটার শুরু থেকেই উইকেটে হাঁসফাঁস করছিলেন। এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার ১০ বলে ৫ রান করে মুমিনুল হক ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাটে লেগে ক্যাচ যায় উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের হাতে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক শান্তও এবার ইনিংস বড় করতে পারেননি।

স্যান্টনারকে চার মারার পরের বলেই তাকে রিভার্স সুইপ করতে গেলে বল প্যাডে লাগে। ১৪ বলে ৯ রান করা এই ব্যাটারকে শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার, পরে রিভিউ নিয়ে সফল হয় নিউজিল্যান্ড। এরপর আর কোনো বিপর্যয় ঘটতে দেননি বাকি দুই ব্যাটার। শাহাদাৎ হোসেন দীপু ও মুশফিকুর রহিম বিরতির পরও খেলছিলেন দারুণভাবে। কিন্তু হুট করেই মুশফিকুর রহিম আউট হন।

ইনিংসের ৪৪তম ওভারে কাইল জেমিসনের বলটা ঠিকঠাক ডিফেন্ড করেন মুশফিকুর রহিম। বলটা মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল উইকেটের পেছনে, স্টাম্পের কাছাকাছিও ছিল না। বলটা ডান হাত দিয়ে আরও একটু ডানে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর জেমিসন আবেদন করেন আউটের, আম্পায়াররা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য যান টিভি আম্পায়ারের কাছে। আউট হয়ে যান মুশফিক।

প্রায় ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পর বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘হ্যান্ডেলড দ্য বল’ আউট হলেন মুশফিক, ২০১৭ সালে অবশ্য আউটটির নাম বদলে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ হয়ে যায়। সবমিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে তিনি কেবল অষ্টম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১তম হিসেবে এমন আউট হলেন। ধারাভাষ্যকক্ষে বসে মুশফিকের কাছের বন্ধু তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘আমি অবাক হবো না এই অভ্যাসটা যদি অনুশীলনের সময় তৈরি হয়ে থাকে। ’

টেস্টে প্রায় ২২ বছর পর এমন আউট দেখলো ক্রিকেট। ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরু টেস্টে ২০০১ সালে শেষবার ‘হ্যান্ডেলড দ্য বল’ আউট হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মাইকেল ভন। রঙিন পোশাকের স্মৃতিটা আরেকটু কাছের। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই আউট হন জিম্বাবুয়ের চামু চিবাবা।

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনেই ৪ উইকেটে হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ, দলের রান তখন কেবল ৪৭। এরপর আগের ম্যাচে অভিষিক্ত শাহাদাৎ হোসেন দীপুকে নিয়ে দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মুশফিক।

এ দুজন খেলছিলেনও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। কিন্তু হুট করে মুশফিকের আউটে ভেঙে যায় জুটি। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৮৩ বলে ৩৫ রান করেন তিনি। মুশফিকের এমন আউটের পর রীতিমতো ধ্বস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। মুশফিকের সঙ্গে দারুণ খেলতে থাকা শাহাদাৎ হোসেন দীপু আউট হয়ে যান। ১০২ খেললেও ৩১ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে, গ্লেন ফিলিপসের বলে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।

তার বিদায়ের পর শেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটার ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নুরুল হাসান সোহান। ১৭ বলে ৬ রান করে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সোহান। ৪২ বলে ২০ রান করা মেহেদী আউট হন স্যান্টনারের বলে ক্যাচ দিয়ে।

৮ উইকেট হারিয়ে প্রথম দিনের শেষ সেশনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। শেষ দুই উইকেট জুটিতে ২৭ রান যোগ করেন তাইজুল ইসলাম-নাঈম হাসান ও শরিফুল ইসলাম। ৪৩ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন নাঈম, ১২ বলে ৬ রান আসে তাইজুলের ব্যাটে; ১২ বলে ১০ রান করেন শরিফুল। কিউইদের পক্ষে তিনটি করে উইকেট পান মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!