খুলনার কয়রা উপজেলাধীন দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম গাজী ও ইউপি উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলামসহ ৪ জনকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে আদালত।
মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কয়রার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ দেলোয়ার হোসেন কারাগারে প্রেরণের এ আদেশ দেন। দীর্ঘ স্থবিরতা কাটিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর চাঞ্চল্যকর পুলিশ হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়লসহ ৩৪জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে পিবিআই।
কারাগারে প্রেরণকৃত আসামিরা হল সিরাজুল ইসলাম গাজী, নাজমুল ইসলাম, তাছের আলী মোড়ল ও দাদরিজ শেখ। মামলার অন্য আসামিরা পলাতক ও জামিনে রয়েছে।
সূত্রমতে, আসামি ধরতে যেয়ে ২০১৩ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল মফিকুল ইসলাম। খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালী গ্রামে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় স্থানীয় আংটিহারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মোঃ মমিনুর রহমান বাদী হয়ে কয়রা থানায় মামলা করেন (যার নং-০৭(৩)১৩। কয়েক দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর ২০১৫ সালের ২১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক সরদার মোঃ হায়াত আলী। এরপর দীর্ঘদিন মামলাটির কার্যক্রম স্থবির ছিল। চার্জশিটভুক্ত আসামি আছের আলী মোড়ল সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হল- গনি সরদার, আনারুল, সিরাজুল, আয়শা, মফিজুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, নাছের আলী মোড়ল, গোলাম মোস্তফা রিপন, রউফ শেখ, দাদরিজ শেখ, আছের আলী মোড়ল, মোঃ তাছের আলী, মোঃ সিরাজুল ইসলাম গাজী, নাজমুল ইসলাম, ওলিউর রহমান, মইনুল ইসলাম লিটন, আলমগীর হোসেন, সাইদুল ইসলাম, মোঃ ওহিদুজ্জামান খোকন, মোঃ মিজানুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, সবুর মোল্যা, কবিরুল সরদার, রুহুল আমিন সরদার, পরিতোষ কুমার, মজিদ গাজী, হাকিম মোড়ল, নাজমুন্নাহার, মহিউদ্দিন মোড়ল, তাইজুল গাজী, আব্দুল হাকিম গাজী, আত্তাপুর জামাল ঢালী, হালিমা ও সুমাইয়া খাতুন।
এরমধ্যে পলাতক আঃ গনি সরদার, আনারুল, সিরাজুল, আয়শা, রেজাউল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, মজিদ গাজীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ চার্জশিটে উল্লেখ্য করেছেন, ২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়রা থানার অপর একটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি আব্দুল গনি সরদারের বাড়ীতে অভিযান চালায় পুলিশ। এদিকে, পুলিশ আব্দুল গনি সরদারের বাড়ীতে পৌঁছানোর পূর্বেই সেই মামলার বাদীর নূরুল আমীন মোড়লের চাচাতো ভাই নাছের আলী মোড়ল, আছের আলী মোড়ল, গোলাম মোস্তফা রিপন, রউফ শেখ, তাইজুল গাজী ও দাদরিজ শেখসহ কয়েকজন হাজির হয়। তাদের সাথে থাকা আসামি পরিতোষ কুমার মন্ডলের বন্দুক ও গুলি, লাঠি-শোটা, হাতুড়িসহ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গনি সরদারকে বাড়ীতে না পেয়ে তার স্কুল পড়ুয়া শিশুসন্তান সিরাজুলকে ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তখন বাড়ীর মহিলা ও শিশুরা ডাক-চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় মসজিদে প্রচার করতে থাকে যে, “নাছের বাহিনীর লোকজন হামলা করেছে। তোরা কে কোথায় আছিস এগিয়ে আয়।” তখন গোলখালী গ্রামের সাধারণ জনগন সমবেত হয়ে প্রতিরোধ করতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও উচ্চস্বরে ডাক-চিৎকার করতে থাকে। এসব ডাক-চিৎকার শুনে ওই পুলিশ ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকালে তদন্তে প্রকাশিত আসামিরা পুলিশ ফোর্সের পেছনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে তুমুল বাক-বিতান্ডা শুরু হয়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশের পেছনে অবস্থান নেয়া আসামিদের মধ্যে আব্দুর রউফ শেখ অপর আসামি আছের আলীর কাছে থাকা বন্দুক দিয়ে গুলি করলে কনস্টেবল মফিজুল ইসলামের বাম পায়ের হাটুর পিছনে বিদ্ধ হয়, এতে মারাত্মক জখম হন তিনি। এসময়ে রাত সাড়ে ১২টা বাজে। চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে নেবার পথে মারা যান কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ হেডকোয়াটার্স মনিটরিং সেলের ১৭৭তম এবং ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল ১৭৯তম সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে প্রত্যেক আসামির অপরাধ শনাক্ত করে অভিযোগপত্র সুনির্দিষ্ট চার্জ এনে অভিযোগপত্র দাখিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই