খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১৫
  ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে বাবা-মেয়ের মৃত্যু
  এমন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  আজ মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা-বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
নকল সন্দেহে ৮০ হাজার রুপালী বিড়ি জব্দ

পাইকগাছায় বন্ধ হচ্ছেনা নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ির বিকিকিনি

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

প্রশাসনের উদাসীনতা ও অসতর্কতায় খুলনার পাইকগাছাসহ প্রত্যন্ত এলাকায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রস্তুতকৃত নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত স্বনামে-বে-নামের বিভিন্ন ব্রান্ডের বিড়ি। কোন কোন সময় বিক্রেতাদের দু’এক জন ধরা পড়লেও বরাবর এর সাথে জড়িত হোতারা থেকে যাচ্ছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সর্বশেষ শনিবার (১৬ জুলাই) ভোর রাতে উপজেলার কপিলমুনি এলাকায় পেট্রোল পুলিশের হাতে ৮০ হাজার শলাকা নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত সন্দেহে রুপালী বিড়ি ও একটি নম্বরবিহীন প্লাটিনা মোটর সাইকেল উদ্ধার হয়েছে।

কপিলমুনি ফাঁড়ি পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে খুলনা থেকে রাজস্ব কর্মকর্তা জিন্নাতুল ফেরদৌস’র নেতৃত্বে কর্মকর্তারা জব্দকৃত বিড়ি ও মোটরসাইকেল তাদের হেফাজতে নিয়েছেন।

এব্যাপারে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক জি,এম এমদাদুল হক জানান, সকালে কপিলমুনি বাজার এলাকা থেকে উক্ত বিড়ি বোঝাই নম্বরবিহীন মোটর সাইকেলসহ এর চালক দেলোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। এসময় সে বৈধ কাগজ-পত্র আনতে চলে যায়। খবর পেয়ে দুপুরের পর জিন্নাতুল ফেরদৌস’র নেতৃত্বে খুলনা রাজস্ব কর্মকর্তারা রুপালী বিড়ির ৮০ হাজার শলাকা ও প্লাটিনা মোটর সাইকেলটি জব্দ করে নিজ হেফাজতে নিয়েছেন।

এর আগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিদের্শে উপজেলা সেনেট্যারী ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল পৌরসদর থেকে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার শলাকা নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত মনির বিড়িসহ যশোরের মনিরামপুর থানার চন্ডিপুর এলাকার মো: আলী হোসেন বিশ্বাসের ছেলে মো: রফিকুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করেন। জব্দকৃত বিড়ির চালান নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে নিলে পাইকগাছার সোলাদানার বয়ার ঝাপার মৃত আ: সামাদ বিশ্বাসের ছেলে আব্দুর রউফ বিশ্বাস নিজেকে সাব ডিলার, সাতক্ষীরার আশাশুণীর ছোবান ঢালীর ছেলে রেজোওয়ান ইসলাম রনি ও সোলাদানার বয়ারঝাপা গ্রামের মো: আবুল কাশেম এর ছেলে মো: শরিফুল ইসলাম নিজেদের কোম্পানীর এসআর পরিচয়ে তাদের আমদানিকৃত সমুদয় বিড়ির প্যাকেটে ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল আসল বলে দাবি করে তাদের কোম্পানী সরকারকে যথাযথ রাজস্ব দেয় বলে চ্যালেঞ্জ করে। এসময় জব্দকৃত বিড়ির চালান পরীক্ষিত ফলাফলের ভিত্তিতে আইনানুগ যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণের শর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) এর মৌখিক নির্দেশে সাবডিলার উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের বয়ারঝাপা গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের ছেলে আব্দুর রউফ বিশ্বাসের জিম্মায় রাখা হয়।

এরপর ইউএনও’র নির্দেশে স্যানিটারী কর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল মনির বিড়ির ৪টি নমুনা প্যাকেট পরীক্ষার জন্য দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে প্রেরণ করেন। যার পত্র নং-উপঃস্বাঃকমঃ/ স্যানি/ পাইক/ খুল/ ২০২১/৯০৮, তারিখ ২৬/১০/২১ইং। এর পরিপ্রেক্ষিতে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ এর অরিজিনেশন, গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: খশরুজ্জামান স্বাক্ষরিত গত ৮ নভেম্বর পত্র নং ৫৩. ১৮. ৩৩০০. ০৩৮.১৬.১৩৪.২০২১-১৩৪ মাধ্যমে উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর উদয় কুমার মন্ডলকে জানানো হয় যে, তাদের কাছে পাঠানো মনির বিড়ির ৪ টি প্যাকেটে লাগানো ব্যান্ডরোলগুলো নকল।

সর্বশেষ অরিজিনেশন, গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পাঠানো তথ্যর ভিত্তিতে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম গত ২৪ নভেম্বর ১৩৪৮ নং স্মারকে জব্দকৃত বিড়িগুলি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার অথবা উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের দফতরে ফেরৎ দেওয়ার জন্য জিম্মাদার আব্দুর রউফ বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন। এরপর অদ্যাবধি তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্যকর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল জানান, এ ঘটনায় তিনি ১৮৬০ এর ২৫৫ এবং ২৬০ ধারায় মনির বিড়ি কোম্পানীর মালিক যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চন্ডিপুর ঘিবা গ্রামের মো: জামসেদ আলীর ছেলে মো: মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ জনের বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ট্যারিফ আইনে প্রতি প্যাকেট বিড়িতে ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলের সরকার নির্দ্ধারিত মূল্য নির্দ্ধারণ করা হয়েছে, ৯ টাকা ০৯ পয়সা। অথচ বাজারে যত্রতত্র বিভিন্ন স্বনামে বেনামের ভুঁইফোড় বিভিন্ন কোম্পানীর নামে নিম্নমানের বিভিন্ন বিড়ি সরকার নির্ধারিত মূল্য’র চেয়ে নাম মাত্র মূল্যে বাজারজাত করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি প্যাকেট ২৫ (শলাকা) বিড়ির দাম ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও নিন্ম মানের কম দামের বিড়ি ৮/১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যেখানে বিড়ির প্যাকেটে ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল গুলোর সরকারের কাছ থেকে খরিদকৃত টাকার চেয়েও কমদামে বাজারজাত করা হচ্ছে।

এব্যাপারে কাস্টমসের পক্ষে সরকারি রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে পোষ্ট মাস্টার জেনারেলদেরকে অবৈধ কোম্পানীর কাছে সরকারের ব্যান্ডরোল বিক্রি না করতে অবহিত করেন।

সর্বশেষ সরকারের রাজস্ব উসুলের পাশাপাশি বিড়ি শিল্পকে বাঁচাতে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর পক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সদয় ও যথাযথ আইনের প্রয়োগে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!