খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত

পাইকগাছায় পৌর বর্জ্যের আগুনে পুড়ছে বনায়নের গাছ, দখল-দূষণ শুরু

শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা

পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্রের কোলঘেঁষে প্রবাহিত শিবসা নদী বক্ষে ফেলা বর্জ্যে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে পুড়ছে সেখানকার বনায়নের গাছ। গত দু-তিন দিন ধরে শিবসার চরভরাটি এলাকায় পৌরসভার অস্থায়ী বর্জ্য কূপে থেকে থেকে চলছে এমন অবস্থা।

পৌরসভার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা শিবসা নদীর চর ভরাটি এলাকা সংরক্ষণে আগেই গড়ে তোলা হয়েছে বনায়ন প্রকল্প। জোয়ারে ভেসে আসা বিভিন্ন প্রজাতির ফল পড়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনায়নকে স্থায়ী রুপদান ও দখল-দূষণ ঠেকাতে পরে হাতে নেয়া প্রকল্প ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে পর্যটন প্রেমীদের। নির্মল পরিবেশে ভর করে পাখ-পাখালির কিচির-মিচির শব্দ যে কাউকে কাছে টানতে সমর্থ হয়েছে প্রকল্পটি। তবে সামগ্রিক পরিবেশে বাঁধ সেধেছে পৌরসভার অপরিকল্পিত বর্জ্য ভান্ডার।

ইতোমধ্যে সেখানকার বর্জ্য পঁচা গন্ধ সামগ্রীক পরিবেমকে ভারী করে তুলেছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বেড়েছে অতীতের যেকোন সময়েে চেয়ে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে বনায়ন সংলগ্ন বর্জ্যস্তুপে কে বা কারা রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে পঁচা বর্জের পোড়া উটকো গন্ধে বাতাসে ঠেলে দিচ্ছে নানা রোগ-জীবাণু। শুধু এখানেই শেষ নয়, সর্বশেষ অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে বনায়নের অনেকগুলো গাছ। কারা করছে? আর কেনই বা করছে? এমন নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে পৌরবাসীর মনে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেচেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিবসা নদীর চর ভরাটি অন্তত ৫ হেক্টর জমিতে ২০১৪ সালে বনায়ন করা হয়। প্রকল্পটি একদিকে যেমন নদী ভরাটি জমির দখল-দূষণ প্রতিরোধ করছে অন্যদিকে বনায়নকে ঘিরে আকৃষ্ট করছে পর্যটন পিপাসুদের। তবে সকল পরিকল্পনায় ছাই ঢালছে এক পৌরবর্জ্য। যা পুড়িয়ে বর্জ্য হ্রাস হলেও পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি উজাড় হচ্ছে বনায়নের গাছ। সম্প্রতি ভরাটি এসকল জমিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কূ-দৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

২০১৪ সালের দিকে উপজেলার শিবসা নদীর জেগে ওঠা চর দখলে মহোৎসব শুরু হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির উদ্দিন শিববাটি থেকে পৌরসভার মাছকাটা পর্যন্ত চরভরাটি অন্তত পাঁচ হেক্টর জমিতে বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। যেখানে বেড়ে উঠেছে সুন্দরবনের গোলপাতা, গেওয়া, বান, ওড়া, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। গত ৮ বছরে বেড়ে ওঠা গাছগুলি এখন দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।

সূত্র জানায়, উপজেলা প্রশাসন এ বনায়ন প্রকল্পটি দেখ-ভালের দায়িত্ব দেয় স্থানীয় বাতিখালী বনায়ন সমিতিকে।

এ বিষয়ে বাতিখালী বনায়ন সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, শিবসা নদীর চর ভরাটি জমির অবৈধ দখল ঠেঁকাতে বনায়ন প্রকল্পটি ছিল উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পিত কৌশল। যাতে করে একদিকে যেমন দখল-দূষণ ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য সৃষ্টি করে প্রকল্পটি নজর কেড়েছে ভ্রমণ পিপাসুদের। বাতিখালী সমিতির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

এসময় তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, সাম্প্রতিক সমযে বনায়নের বেশ কিছু জায়গা অবৈধ দখলে নিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে চিংড়ি ঘের, বসত-বাড়িসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ পৌরসভার বর্জ্য ফেলায় সেখানে তৈরি হয়েছে আবর্জনার স্তুপ। কিছু দিন পর পর ঐ স্তুপে আগুণ ধরিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে সংলগ্ন বিভিন্ন প্রজাতির বহু গাছের অপমৃত্যু হচ্ছে। এরপর একটা সময় ঐ সকল মরা গাছ কেটে সেখানকার জমির দখল নিচ্ছে কতিপয় প্রভাবশালীরা। আর এভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সাথে আরেকটি ঘটনার দারুণ যোগসূত্র রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

পাইকগাছা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শেখ মাহবুবর রহমান রঞ্জু বলেন, ‘ইতোমধ্যে শিবসা নদীতে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে আগের ফেলা বর্জ্যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন, ঐসকল জায়গা দখলের কারো সুযোগ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, ‘পৌরসভা বর্জ্য অপসারণে ডাম্পিং স্টেশন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকান্ড কিংবা চরভারাটি জায়গা দখলের কোন সুযোগ নেই। এমনটি হলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!