পাইকগাছার সলুয়ায় ডোবা থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত যুবকের লাশ শনাক্ত হয়েছে। তার নাম ইব্রাহীম মোড়ল। তার এনআইডি নং-২৮৫২৪৪৯৩৩৪। সে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের কাচের আলী মোড়লের ছেলে। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বাড়ি থেকে যশোরে একটি ইট ভাটায় কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় সে।
এদিকে ঘটনার প্রায় ৩ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হত্যার কোন মোটিভ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কারা কি উদ্দেশ্যে এবং কিভাবে তাকে হত্যা করা হয় তার কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি।
নিহতের বড় ভাই ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। গত ৯ নভেম্বর সাতক্ষীরা আদালতে জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলায় ধার্য দিনের কথা জানাতে মোবাইলে ফোন দিচ্ছিলেন তিনি। তবে ভাই ইব্রাহিমের ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় তিনি বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারেন যে, তার ভাই কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে যশোরে গেছে। এরপর ৬ নভেম্বর উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের নির্জন মাঠের মধ্যে একটি ডোবা থেকে পাইকগাছা থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনার ৩ দিন পর ৯ নভেম্বর সাতক্ষীরা আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পথে জনৈক মহিলা তাকে তাদের এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের লাশ উদ্ধারের কথা জানায়। লাশের বিবরণ ও পরিধেয় কাপড়ের বিবরণ শুনে ইসমাইল ঐ দিনই কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়িতে তার ভাইয়ের একটি ছবিসহ হাজির হন। এরপর ফাঁড়ি থেকে উদ্ধারকৃত লাশের ছবি দেখে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন। তবে পুলিশের পক্ষে হত্যার ক্লু উদঘাটনের সুবিধার্থে খানিকটা দেরিতে বিষয়টি সকলের সামনে আনেন।
তবে বিলম্বের বিষয় নিয়ে অজানা আশঙ্কায় ইসমাইল মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে স্থানীয় খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টুকে সাথে নিয়ে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়িতে উপস্থিত হন। এসময় তারা নিহত ইব্রাহিমের হত্যাকারীদের অতিদ্রুত আইনের আওতায় নেয়ার পাশাপাশি তার লাশটি ফেরৎ চান।
ইসমাইল আরো জানান, ঘটনার প্রায় মাস তিনেক আগে ইব্রাহীমকে তার স্ত্রী নাসরিন বেগম ডিভোর্স দেয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের আক্তারুল ইসলাম নামে সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তবে স্বামীর মৃত্যুর খবরে নাসরিন গত ১২ নভেম্বর ফের স্বামীর বাড়িতে ফিরে এসেছে। তার দাবি, বাকি জীবন একমাত্র ছেলে আক্তারুলকে নিয়ে স্বামীর ভিটায় থাকতে চায়।
এলাকাবাসী জানায়, জীবদ্দশায় ইব্রাহীমের চলাচল ভাল ছিলনা। বিভিন্ন সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ থাকতো। ছোট-খাট অপরাধের সাথেও সম্পৃক্ততা ছিল তার। তবে তাকে কারা, কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তার কোন ক্লু দিতে পারেনি তারা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ৪ নভেম্বর কাটিপাড়া বাজারে অজ্ঞাত পরিচয় মহিলার সাথে ইব্রাহীমকে ঘুরতে দেখা গেছে। হয়তো ঐ মহিলাকে দিয়েই তাকে সেখানে ডেকে নেওয়া হতে পারে। এছাড়া লাশ উদ্ধারের সময় তার পরনে কোন কাপড় ছিলনা। কেউ আত্মহত্যা করলেও তার উলঙ্গ হওয়ার কথা নয়। তার উলঙ্গ লাশের মধ্যেও তার হত্যার রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে।
এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এস আই আব্দুল আলীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এব্যাপারে থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। যার নং-৪, তারিখ ০৬/১১/২১ ইং। ইতোমধ্যে স্বজনদের মাধ্যমে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে হত্যার ক্লুসহ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর বেলা ১১ টার দিকে পাইকগাছা থানা পুলিশ উপজেলার কপিলমুনির সলুয়া এলাকার একটি মাঠের মধ্যে ডোবা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় লাশটি উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, প্রতিদিনের ন্যায় ঐদিন সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ক্ষেত পরিচর্যায় ক্ষেত মালিক আছাদুল ইসলাম সেখানে গিয়ে ভাসমান লাশটি দেখে প্রথমে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ি ও পরে থানা পুলিশে খবর দেন। পরে বেলা ১১ টার দিকে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
উদ্ধারের সময় ভাসমান উলঙ্গ অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে। এসময় উলঙ্গ লাশের গায়ে কালো রঙের মোটা কাপড়ের গেঞ্জি ও ভেতরে লাল রঙের গেঞ্জি ছিল। এসময় পুলিশ লাশের অনতিদূরে ক্ষেতের মধ্য থেকে ১ টি জুতা, বিস্কুট, চানাচুর, পকেট টিস্যু, শ্যাম্পুর খালি প্যাকেট উদ্ধার করে।
ধারণা করা হচ্ছে, কেউ বা কারা তাকে পরিকল্পিতভাবে বাড়ি থেকে সেখানে ডেকে নিয়ে হত্যা শেষে লাশ ঐ ডোবায় ফেলে রেখে গিয়ে থাকতে পারে। সর্বশেষ হত্যার ক্লু উদঘাটনে পুলিশ পুরোদমে কাজ করছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই