খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

নড়াইলের চাচুড়ি হাটে ৪ কোটি টাকার চারা বিক্রি

লোহাগড়া প্রতিনিধি

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি হাটে বোরো মৌসুমে মাত্র আড়াই মাসে অন্তত ৪ কোটি টাকার বোরো ধানের পাতো (চারা) বিক্রি করছে স্থানীয় কৃষকেরা। এভাবেই প্রতি মৌসুমে বাড়তি রোজগার করছেন এলাকার এসব কৃষকেরা। আর এ হাটকে ঘিরে এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার কৃষক, ব্যবসায়ী, পরিবহন চালকসহ হাট সংশ্লিষ্টদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নড়াইল-কালিয়া সড়কের পাশে কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি এলাকায় বিশাল খেলার মাঠে বসেছে বোরো ধানের চারার হাট। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এখানে প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চারা বেচাকেনা হয়। কৃষকেরা জানান, এলাকার অন্তত ২ হাজার কৃষক এই চারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। চারা বেচাকেনায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। বেশ কয়েক বছর ধরে এই হাট থেকে ধানের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী জেলা গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, বাগেরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আড়াই মাস এখানে চারা বেচাকেনার ধুম পড়ে। এ হাটে অন্তত দশ প্রকার ধানের চারা বেচাকেনা হয়। ৫০-৭০টি চারা দিয়ে একমুঠো (আঁটি) করা হয়, আশি আঁটি চারায় এক পোন হয়। এক পোন (৮০ আঁটি) চারা আকারভেদে ২৫০-৪০০ টাকা বিক্রি হয়। লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতি বছর তিনি এই হাটে চারা কিনতে আসেন। গত বছর থেকে প্রতি পোন চারা অন্তত ২০-৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পুরুলিয়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মরফু শেখ জানান, ৫-৬ বছর ধরে নিজের জমিতে চারা উৎপাদন করে এই হাটে বিক্রি করেন তিনি। এ বছর ৩০ শতক জমিতে চারা উৎপাদন করেছিলেন তিনি। খরচ হয়েছে ২২-২৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন তিনি। আর এক কৃষক রিপন মোল্লা বলেন, এক থেকে দেড় মাসের ফসল এটি। যে জমিতে চারা দেওয়া হয় সেই জমির চারা তুলে ধানের আবাদ করতে কোনো ক্ষতি হয় না। ফলে তিন ফসলি এসব জমি থেকে এখন বছরে চারবার ফসল ফলানো যাচ্ছে আর যেসব জমিতে বছরে দুবার ফসল ফলানো যেত সেখানে তিনবার ফসল ফলানো যাচ্ছে।

ব্যবসায়ী লিটন কাজী জানান, প্রতি হাটে এখানে যে পরিমাণ চারা বিক্রি হয় সেই চারা পরিবহন করতে ৩০০-৩৫০ ভ্যান লাগে। ৮-১০ হাজার টাকায় যে চারা পাওয়া যায় সেই চারা একটি ভ্যানে বহন করা যায়। বাগেরহাট থেকে চারা কিনতে আসা কৃষক জসিম শেখ জানান, গত বছরও তিনি এই হাট থেকে চারা কিনে জমিতে রোপণ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় এ বছরও তিনি চারা কিনতে এসেছেন।

হাট সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি হাটে ২০-২৫ লাখ টাকার কেনাবেচা হয় এখানে। সে হিসাবে প্রতি মৌসুমে আড়াই মাসে ২০-২২ হাটে অন্তত ৪ কোটি টাকার চারা কেনাবেচা হয় এই হাটে। হাটের ইজারাদার মিজান শেখ বলেন, কৃষকদের কথা বিবেচনা করে যারা এখানে চারা বিক্রি করতে আসে তাদের কাছ থেকে কোনো খাজনা নেওয়া হয় না। যারা চারা কিনে নিয়ে যান তাদের কাছ থেকে ভ্যানপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত খাজনা নেওয়া হয়।

স্থানীয় চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম (মনি) বলেন, ইউপি পরিষদ ভবনের পাশে এ হাটে যারা চারা কেনাবেচা করেন তাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি এখানে নেই। পরিষদের পক্ষ থেকে হাট সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয় যাতে কোনো কৃষক ও ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দিন দিন এ হাটের পরিধি বাড়ছে।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, নড়াইলের চাচুড়ি হাটসহ জেলার আরও বেশ কয়েকটি হাটে এই মৌসুমে চারা বেচাকেনা হয়। জেলার মধ্যে চাচুড়ি চারার হাট সবচেয়ে বড়। দিন দিন কৃষকেরা এই চারার ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে।

খুলনা গেজেট/ বিএমএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!