যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়াকে প্রথম শ্রেণির নৌবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বন্দরের উন্নয়নে কোন কাজ করেনি বিআইডব্লিউটিএ। সরকারীভাবে ৯টি ঘাট ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করে থাকে। কিন্তু এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। বেশিরভাগ ঘাট ও সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দুই-একটা পন্টুন ও জেটি ছাড়া কিছুই নেই এই বন্দরে। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই পুরো বন্দর জুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা,কাদার গড়াগড়ি। ফলে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ী, যানবাহনের শ্রমিক ও বন্দরে মালামাল বহনকারী প্রায় ২১ হাজার শ্রমিক।
২০০৪ সালের মে মাসে নওয়াপাড়ার ভৈরব নদের তীরে গড়ে ওঠা বন্দরকে প্রথম শ্রেণির নৌ বন্দর হিসেবে গেজেটভুক্ত করে সরকার। কিন্তু ১৮ বছরেও প্রথম শ্রেণির নৌবন্দরটির তেমন কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। নানান দূর্ভোগ মাথায় নিয়েই বাণিজ্য কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
সূত্র জানায়, নওয়াপাড়া নদী বন্দর ব্যবসা বাণিজ্যের দিক দিয়ে দেশের মধ্যে অন্যতম একটি বন্দর। বিশেষ করে যশোর অঞ্চলের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। দেশ এবং বিদেশ থেকে বড় বড় জাহাজ, বার্জ, কার্গো ও ট্রলার নৌপথে সার, সিমেন্ট, কয়লা, বালুসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশষ্য নিয়ে নওয়াপাড়ার নৌবন্দরের ঘাটে আসে। এসব পণ্য নৌবন্দর থেকে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে উত্তর অঞ্চলসহ সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় মোকাম হিসেবে নওয়াপাড়া সারা দেশে অল্প সময়ের মধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে। ব্যবসা বান্ধব ঐতিহ্যবাহী নওয়াপাড়াকে ২০০৪ সালে নদীবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বন্দরের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি বিআইডব্লিউটিএ। সরকারীভাবে ৯ টি ঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্সকৃত ৭৯টি ঘাট রয়েছে এই নদী বন্দরে। তবে বেশিরভাগ ঘাটগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম, তুহিন হোসেন, সোহাগ খান, জুয়েল রানা বালেন, একটি পন্টুন ও ৮টি জেটি ছাড়া কিছুই নেই এ নৌবন্দরে। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো বন্দরজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে কাঁদা-পানিতে ভরে যায় খানাখন্দে ভরা বন্দরের এ সড়কগুলো। ফলে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ী, যানবাহনের শ্রমিক ও বন্দরে মালামাল বহনকারী প্রায় ২১ হাজার শ্রমিক। নওয়াপাড়া নৌবন্দরের বেশিরভাগ সড়কের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না এ সড়কগুলো। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে বড় বড় জাহাজ, কার্গো ও টলার নৌপথে সার, সিমেন্ট, কয়লা, বালুসহ নানা পণ্য নিয়ে নৌবন্দরে আসে। এসব পণ্য নৌবন্দর থেকে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
নৌ বন্দরের ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম সুমন বলেন, নৌ বন্দর ঘোষণা করা হলেও এর রাস্তাাঘাটের বেহাল দশা। এতে আমরা চরম ক্ষতির মধ্যে রয়েছি। আমরা নিয়মিত খাজনা দিচ্ছি। কিন্তু কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। দ্রুত বন্দরের রাস্তাগুলো সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
নওয়াপাড়া সার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গনি সরদার বলেন, নওয়াপাড়াকে নৌ বন্দর ঘোষণা করা হলেও এর রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। এতে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মধ্যে আছে। আমরা নিয়মিত খাজনা দিচ্ছি। কিন্তু তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। তিনি আরোও বলেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের সাথে যদি গাইডওয়াল করা হয় । তাহলে নওয়াপাড়া ব্যবসায়ীদের মনের আশা পূরণ হবে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দরে গাইডওয়াল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
যশোর জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও ব্যবসায়ী মো. রেজাউল বিশ্বাস জানান, নওয়াপাড়া নদীবন্দর একটি ঐতিহ্যবাহী বন্দর হিসেবে পরিচিত। এ বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও বন্দরের উন্নয়নের তেমন কোনো কাজ করা হচ্ছে না। বন্দরের রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায়ই সময় যানবাহন বিকল হয়ে রাস্তা বন্ধ থাকে। ফলে বন্দরে মালামাল লোড আনলোড করতে ব্যহত হয়। পাশাপাশি গাড়ির যন্ত্রাংশ মাঝেমধ্যে নষ্ট হয়ে যায়।গুনতে হয় অনেক টাকা।তাই আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন এই রাস্তাগুলোর উপর সুদৃষ্টি দেয়।
এবিষয়ে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মোহাঃ মাসুদ পারভেজ বলেন, নৌবন্দরের রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। ইতোমধ্যে বন্দরের রাস্তা সংস্কারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য প্রায় ৪৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড