‘দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বন্দরসমূহের নিরাপত্তা প্রদান, সমুদ্র বাণিজ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ব্লু-ইকনোমি বাস্তবায়নসহ দেশের যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলোয় নৌবাহিনী সর্বদা নিবেদিত।’ বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘জাহাজ বিশখালী’র কমিশনিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) খুলনার বানৌজা তিতুমীরে এ কমিশনিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও সক্ষম নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সর্বোপরি ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী অপরিহার্য। নৌবহরের সক্ষমতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ এক সুদক্ষ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত জাহাজ ‘বানৌজা বিশখালী’ নৌবাহিনীর সক্ষমতার আর একটি মাইল ফলক। নৌবাহিনীর অন্যান্য যুদ্ধজাহাজের ন্যায় এজাহাজটি দেশের নদী ও সমুদ্রসীমার চোরাচালন প্রতিরোধ, উপকূলীয় এলাকায় টহল প্রদান, অবৈধ মৎস্য আহরণ প্রতিরোধ, বাণিজ্যিক জাহাজকে জলদস্যুর কবল থেকে নিরাপত্তা প্রদান, মাদকদ্রব্যসহ নিষিদ্ধ বস্তুর অনুপ্রবেশ রোধকরণ, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করাসহ অপারেশনাল কর্মকান্ডে নিয়োজিত থেকে দেশ সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, নৌবাহিনীর নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে একদিকে যেমন বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে, অপরদিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ক্রেতা নৌবাহিনী থেকে নির্মাতা নৌবাহিনী হিসেবে নতুন সক্ষমতার উন্নীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাহাজটির অধিনায়কের নিকট কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং অনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, ‘বানৌজা বিশখালী’ জাহাজটি ১৯৭৮ সালে নৌবাহিনীতে কমিশনিং এর পর থেকে সকল অপারেশনাল কার্মকা-ে সফলতার সাথে অংশগ্রহণ করেছে। দীর্ঘ ৩৬ বছর দেশের জলসীমার সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকার পর জাহাজটি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী হতে ডি-কমিশন করা হয়। পরিবর্তীতে খুলনা শিপইয়ার্ডে ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর নতুন করে জাহাজটি নির্মাণের লক্ষ্যে কিল লেয়িং করা হয়। ৪১তম টহল নৈপুণ্য স্কোয়াড্রন এর পঞ্চম জাহাজ ‘বানৌজা বিশখালী’ নির্মাণ শেষে গত ২২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ নৌবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নব সংযোজিত জাহাজটি দৈর্ঘ্য ৫১.৬ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৫ মিটার। জাহাজটি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২১ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। জাহাজটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এবং একটি ৪০ মিঃ মিঃ বফর গান, দুইটি ১২.৭ মিঃ মিঃ হেভি মেশিন গান, মাইন লেইং রেল, অত্যাধুনিক সারভাইলেন্স র্যাডার, জিপিএস, ইকো-সাউন্ডার সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরণের যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের পিএসওগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/ টিএ