যশোর প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে প্রায় দু’কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্ত শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত তদন্ত টিমের অনুসন্ধানে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পর পুলিশ আলোচিত বাকীকে রাতেই আটক করেছে।
এদিকে, তদন্ত টিম জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের টাকা পোস্ট অফিসে জমা না দিয়ে ট্রেজারিতে জমা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যশোর প্রধান ডাকঘরের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল গোলাম রহমান পাটওয়ারী এ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেছেন।
সূত্র জানায়, তদন্ত টিম ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি থেকে তার দায়িত্ব পালন করা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের আর্থিক লেনদেন তদারকি করে পোস্ট অফিসের সাধারণ হিসাব শাখায় ভুয়া লেনদেন হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে। আব্দুল বাকী যে কোনো পাস বইয়ের একাউন্ট নম্বরে টাকা জমা দেখিয়ে লেজারে তুলতেন। অথচ ওই পরিমাণ টাকা সব সময়ই ঘাটতি থাকতো। পরে তিনি প্লান করে ওই বইয়ের মাধ্যমে টাকা তুলে নিতেন। এভাবেই গত এক বছরে তিনি ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তদন্ত টিমের কাছে তথ্য মিলেছে। তদন্ত টিম বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত টিমের সদস্যরা।
সূত্র আরো জানায়, গত কয়েকদিন আগে হেড পোস্ট অফিসে একজন মৃত ব্যক্তির পাস বইতে তিনি ১শ’ টাকার পরিবর্তে ১৩ লাখ টাকা জমা দেখিয়ে উত্তোলনের চেষ্টার সময় বিষয়টি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের নজরে আসে। এক গ্রাহক কয়েকদিন আগে পোস্ট অফিসে টাকা রেখে মারা যান। মৃত্যুর পর তার ওই টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন সহকারী পোস্ট মাস্টার আব্দুল বাকী। ওই বইতে ১৩ লাখ টাকা জমা দেখিয়ে তুলতে গিয়ে ধরা পড়েন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। যার নেপথ্যে ছিলেন অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও এক ব্যক্তি। যিনি প্রতিনিয়ত হেড পোস্ট অফিসে এসে ওই টাকা তুলে নেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন। আব্দুল বাকী ওইসব কাগজপত্রে সুপারিশ করে স্বাক্ষরও করেন। টাকা তোলার আগ মুহূর্তে বিষয়টি ধরা পড়ে। এক কর্মকর্তা বিষয়টি বুঝতে পেরে খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তাকে জানান। এরপর মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চল খুলনা পোস্ট মাস্টার জেনারেল শামসুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম যশোর প্রধান ডাকঘরে তদন্তে আসেন।
এসময় বাকীকে খুলনা বিভাগীয় ডাকঘরে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়। এরপর তদন্তে শুক্রবার আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। ওই রাতেই তাকে খুলনা থেকে আটক করা হয়। পরে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলার পর রাতেই তাকে থানায় হস্তান্তর করে ডাকবিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চল খুলনার পোস্ট মাস্টার জেনারেল সামসুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বাকীর কর্মকান্ড নিয়ে তদন্তের জন্য টিম গঠন করা হয়।
তদন্ত টিমের সদস্যরা হলেন, খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (তদন্ত) খন্দকার মাহাবুব হোসেন, যশোরের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মিরাজুল হক, খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল (নিরাপত্তা) ফিরোজ আহমেদ, খুলনা সার্কেলের সুপারিনটেনডেন্ট (তদন্ত) বাবুল আখতার, খুলনা দক্ষিণ উপবিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক প্রনবেশ গাইন, যশোর ডাক বিভাগের শহর পরিদর্শক পবিত্র কুমার গাইন।
তদন্ত টিমের একজন সদস্য বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল তার সত্যতা মিলেছে। যার জন্য তার বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি থানায় যশোর প্রধান ডাকঘরের বর্তমান সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল গোলাম রহমান পাটওয়ারী বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল বাকী ডাকঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সবসময়ই খারাপ আচরন করতেন। নিজের বাড়ি যশোর শহরে হওয়ায় সবাইকে হুমকিও দিতেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন অফিসের সবাই। শুধু তাই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির ভয় দেখিয়ে টাকা হাতানোর অভিযোগও রয়েছে বাকীর বিরুদ্ধে।
খুলনা গেজেট/ বি এম এস