খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ মাঘ, ১৪৩১ | ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ইসলামকে ধানমণ্ডি থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকার খোলার অনুমতি পেল দুদক

দিঘলিয়ায় সড়ক নির্মাণে ধীরগতি, জনদুর্ভোগ চরমে

একরামুল হোসেন লিপু

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন তেতুলতলা হতে গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের উন্নয়ন কাজে ধীরগতির কারণে জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। মাটি খুঁড়ে ৩ ফুট গর্ত করে রাখায় সড়কটি দিয়ে স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ জনসাধারণসহ যানবাহন চলাচলে দুর্ভাগ হচ্ছে। ৫ মাসে কাজের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ। চলতি বছরের ১০ মে’র মধ্যে সড়কটির উন্নয়ন কাজ সমাপ্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয় ।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৩ ফুট গভীরতা করে সড়কটির মাটি খুঁড়ে দু’পাশে স্তুুপ করে রাখা হয়ছে। বর্তমানে সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। সাব কন্ট্রাক্টর সবুজ কিংবা কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী জানায়, ২২ দিন পূর্বে সাব কনট্রাক্টর এলাকার সবুজ ভেকু দিয়ে সড়কটির তেতুলতলা হতে মোসলেম হাওলাদারের কলঘর পর্যন্ত সড়ক ৩ ফুট গভীরতা করে মাটি খুঁড়ে সড়কের দু’পাশে স্তুুপ করে রাখে করে রাখে করে।এছাড়া সড়কটির দুইটি স্থানে কালভার্ট তৈরির জন্য মাটি খুঁড়ে গর্ত করে রাখে। এরপর থেকে কাজের সাইডে সাব কন্ট্রাক্টর সবুজ কিংবা তার লোকজনদের আর দেখা মেলেনি। লাপাত্তা হয়ে যায় সে। বর্তমানে সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলোশ্রুতিতে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকসহ পথচারীদের যাতায়াত এবং দোকানদারদের মালামাল আনা নেওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। সড়কের এই দুরাবস্থার কারণে প্রায়শই পথচারীরা পড়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন(কেডি আরআইডিপি) প্রকল্পের আওতায় দিঘলিয়া হাইস্কুল থেকে ব্রক্ষগাতী এক কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মেসার্স আমানাত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সড়কের দু’পাশে গাইড ওয়ালসহ কাজের মোট প্রাক্কলিত মূল্য ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬৫২ টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ১০ মে। কাজের মূল ঠিকাদার মেসার্স আমানত এন্টারপ্রাইজ নিজে কাজ না করে স্থানীয় সবুজ নামে একজন অযোগ্য এবং অদক্ষ সাব কনট্রাক্টর নিয়োগ দেয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৫ মাস অতিবাহিত হলেও কাজের অগ্রগতি খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। ৫ মাস কাজ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, অত্র এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে সরকারি এম এ মজিদ কলেজ, দিঘলিয়া এম এ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দিঘলিয়া (দঃ)সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিঘলিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকসহ এলাকার অসংখ্য মানুষ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া সড়কটির দু’পাশে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকানপাট রয়েছে । সড়কটি’র মাটি তিন ফুট খুঁড়ে গর্ত করে রাখায় যাতায়াতকারী যানবাহনসহ পথচারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দিঘলিয়া এমএ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিজাউল ইসলাম বলেন, স্কুলে আসা-যাওয়ার একটা মেইন রাস্তা প্রায় দুই মাস হল ভেকু দিয়ে খুঁচা হয়েছে। কিন্তু কাজ বন্ধ আছে। এভাবে রাস্তা খুঁড়ে রাখার ফলে স্কুলের অনেক ছেলে মেয়ে দুর্ঘটনা স্বীকার হচ্ছে। স্কুলের উপস্থিতির হারও কমে গেছে। রাস্তার মাটি খুঁড়ে স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে স্তুুপ করে রাখায় প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে গেছে।

তেতুলতলা বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ কাদের মোড়ল বলেন, রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রায় দুই মাস কেটে রেখেছে। রাস্তা দিয়ে বয়স্ক, অসুস্থ, বাচ্চাদের যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে। দোকানদার এখানে যারা ব্যবসা করে তাদের মালামাল আনা নেওয়া নিয়েও খুব অসুবিধা হচ্ছে। মেইন রাস্তা থেকে নামার কোন অবস্থা নেই। দীর্ঘদিন যাবত এই কাজটি এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসীর দুর্ভোগ হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি এভাবে গর্ত করে রেখেছে। স্কুল এবং কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। মহিলা শিশু এবং বয়োবৃদ্ধদের চলাফেরা করতে যেয়ে হাত পা ভেঙ্গেছে। সামনে বৃষ্টির সিজন। বৃষ্টি শুরু হলে আরো দুর্ভোগ বেড়ে যাবে।

সড়কের পাশের বাসিন্দা কাজী সারোয়ার হোসেন বলেন, স্কুলে যাতায়াতের মেইন রাস্তাটি খাল কেটে রেখেছে। যাতায়াতে আমাদের সবার অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

তেতুলতলা এলাকার দোকানদার দিদারুজ্জামান ফনু বলেন, রাস্তায় দুই সাইডে গাইডওয়াল ১ নং ইট দিয়ে তৈরি করার কথা থাকলেও সেখানে ২ নং ৩ নং ইট ব্যবহৃত হয়েছে। ৪ টায় ১ টা সিমেন্ট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেখানে ১০/১২ টায় ১ ব্যাগ সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে। রাস্তা সোজা থাকলেও দুই পাশের গাইডওয়াল আঁকাবাঁকা করা হয়েছে। অদক্ষ মিস্ত্রি দিয়ে গাড়ি ধোঁয়া তৈরি করা হয়েছে।

কাজের মূল ঠিকাদার আমানত এন্টারপ্রাইজ কিংবা সাব কন্ট্রাকটর সবুজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আবু তারেক সাইফুল কামালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমানত এন্টারপ্রাইজ নামে দিঘলিয়ার তেতুলতলা হতে এক কিলোমিটার রাস্তা কেডিআরআইডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঠিকাদার দিঘলিয়ার সজিব নামে একজনকে সাব কন্টাক্ট নিয়োগ দিয়েছে। ছেলেটির অতীত রেকর্ড বেশি একটা ভালো না। ইতিপূর্বে যতগুলো কাজ করেছে প্রত্যেকটি কাজ আমরা লোকাললি খুব বিড়ম্বনা এবং বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছি। তাকে সার্বক্ষণিক মনিটর করে কাজ আদায় করে নেওয়া আমাদের জন্য খুব কষ্টের হচ্ছে। পক্ষান্তরে মাটি কাটার এস্কেভেটর নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ঠিকাদার বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখেছেন। বড়সড় একটা দুর্ভোগ নেমে এসেছে ওই এলাকায়।

তিনি আরও বলেন, এই কাজ আমি সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। চলাচলের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা প্রতিনিয়ত ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। তাকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে কার শুরু না করলে আমরা লিখিত অ্যাকশনে যাবো। যেভাবেই হোক আমরা কিছুদিনের মধ্যে এই সংকট থেকে কিভাবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ রোধ করতে পারি সে বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!