বাঁশের বেড়া এবং গোলপাতার ছাউনির ঘরে বসবাস। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি গোলপাতার ছাউনি ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করে। বয়স যখন ৬ বছর বাবা ইমদাদ শেখ ৬ ভাই-বোন রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। মা এবং বড় ভাইয়ের অভাবের সংসারে তাঁর বেড়ে ওঠা। অনুশীলনের পর পর্যান্ত খাবার কখনও জোটেনি তার ভাগ্যে। একজোড়া উন্নত কেডস ‘র অভাবে ভালোভাবে অনুশীলন করতে পারেনি।
বাই সাইকেলের অভাবে নিজ বাড়ি থেকে বহুদূর পার্শ্ববর্তী গ্রামে পাঁয়ে হেঁটে প্রতিদিন অনুশীলন করতে যেতে হতো। এক কথায় দারিদ্রতা যার নিত্যসঙ্গী, সেই ইকরামুল হোসেন ইকরাম যে এলকায় নাইম নামে অধিক পরিচিত। সেই নাইম গত ৪ মার্চ রাজধানী ঢাকার বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস-২০২৩ ‘র ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দ্রুততম মানব হওয়ার হওয়ার গৌরব অর্জন করে স্বর্ন পদক জিতে গর্বিত করেছে মা, বড় ভাইসহ তাঁর মাতৃভূমি খুলনা তথা দিঘলিয়ার ব্রক্ষগাতী গ্রামের মাটি এবং মানুষদের। তার এ সাফল্যে এলাকাবাসী দারুন উৎফুল্ল।
গত ২ দিনে এলাকায় নাইমের এ সাফল্য নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে সরব আলোচনা। নাইমের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ইলেকট্রনিক টাইমিং ‘র রেকর্ড ১০ দশমিক ৮০ সেকেন্ড।
অদম্য ইচ্ছা প্রতিভা এবং লক্ষ্য যদি অটুট থাকে দারিদ্রতা কোনো বাধা নয়। সেটাই প্রমাণ করে দেখালো খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ব্রক্ষগাতী গ্রামের হতদরিদ্র নাইম শেখ । নাইম শেখের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এ গ্রামেই। ব্রক্ষগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালায় থেকে ৫ম শ্রেনী পাস করার পর ভর্তি হন একই গ্রামের ফাতেমা মেমোরিয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় নাইম ১০০ মিটার, ২০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে অনুশীলন শুরু করে।
সাফল্যের অদম্য ইচ্ছা নিয়ে নিজ গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে পার্শ্ববর্তী দিঘলিয়া ওয়াই এম এ ‘র সুপরিসর মাঠে অনুশীলন করতে যেতো। ২০১৭ সালে সাফল্য তার হাতে ধরা দেয়। এ বছর ঢাকার মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজে অনুষ্ঠিত ৪৬ তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৪ টি ইভেন্টে ১ম স্থান অধিকার করে ৪টি স্বর্ণপদক বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন ট্রফি লাভ করে।
এর ১ বছর পর ২০১৯ সালেও সে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ৪৮ তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ২টি স্বর্ন পদক ও ২টি রৌপ্য পদক অর্জন করে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন ট্রফি লাভ করে।
গত ৬ বছরে নাইমের ব্যক্তিগত সাফল্য ৩০টি পদক প্রাপ্তি। এরমধ্যে ২০ টি স্বর্ন পদক এবং বাকী ১০ টি রৌপ্য পদক এবং ২ বার জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন ট্রফি অর্জন।
দারিদ্রতাকে জয় করে যুব গেমস -২০২৩ ‘র দ্রুততম মানব হওয়ার গৌরব অর্জনকারী নাইম খুবই উৎফুল্ল। এখন তার একটাই প্রত্যাশা ভালো একটা চাকুরীর।
ছেলের সাফল্যে তার বৃদ্ধা মা, বড় ভাইসহ প্রতিবেশীরাও খুবই আনন্দিত। তাদের সকলেরও একটাই প্রত্যাশা নাইমের এই সাফল্যের মাধ্যমে তার একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হোক। সাচ্ছন্দ বয়ে আসুক তাঁর অভাবী মা এবং বড় ভাইয়ের সংসারে।
খুলনা গেজেট/এসজেড