খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া-দিগরাজ আন্তঃ জেলা খেয়া ঘাটের বেহাল দশা। ঘাট সংস্কার বা পন্টুন না থাকায় প্রতিনিয়ত নদীতে ভাটার সময় যাত্রীদের কাদাপানিতে নেমে এমনকি বাঁশের সাঁকো ভাঙ্গা ঘাট দিয়ে ট্রলারে উঠতে হচ্ছে। সঠিক সেবার কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও যাত্রীদের নিয়মিত ইজারার টাকা পরিশোধ করে ট্রলারে যাতায়াত করতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। খুলনা-মোংলাসহ দেশের সকল জায়গায় যেতে হলে এলাকার মানুষকে এই ঘাট দিয়ে ট্রলারে করে পার হতে হয়। আর আসা-যাওয়ার সময় যাত্রীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয় পল্টুন না থাকায়। যোগাযোগের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এখানে যাতায়াতের শেষ ভরসা ট্রলারে করে নদী পার হতে হয়। কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক, স্কুল কলেজের পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষক, শিশু, বৃদ্ধ নারী পুরুষ সকলকে উঠতে হয় প্রচুর কষ্ট করে এই ঘাট দিয়ে।
জানা গেছে, এই খেয়া ঘাটটি চলতি বছর মোংলা উপজেলা প্রশাসন থেকে রাজস্ব দিয়ে ইজারা গ্রহণ করেন খেয়াঘাটের মাঝিরা।
ঘাট সমিতির সভাপতি হাবি সরদার বলেন, এত টাকা রাজস্ব দিয়ে ঘাট কিনে এখন বিপদে আছি। দিগরাজের পারে ঘাট এলাকায় ভাঙ্গন লাগায় কিছুতেই ভাঙ্গন রোধ করতে পারছি না। এছাড়া বাজুয়া পারেও পাকা ঘাটের শেষে বাঁশের সাঁকোর ঘাট থাকায় জোয়ারে নদীর স্রোত ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঘাট ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। ঘাট ভেঙে যাওয়ায় কাদাপানিতে যাত্রীরা উঠতে চায় না। তারপরও মালামাল উঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে রয়েছে আরও সমস্যা।
লাউডোব ইউনিয়নের কাকড়া ব্যবসায়ী বাবু বলেন, শুধু বাজুয়া, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, বানিশান্তা, দাকোপ ইউনিয়নের লোকজন এ ঘাট দিয়ে চলাচল করে তা নয়, পাশের অনেক জেলার ও ইউনিয়নের লোকজনও যাতায়াত করে থাকে। মালামাল নিয়ে এছাড়া অনেক সময় অসুস্থ রোগী ট্রলারে উঠতে ঘাট দিয়ে খুবই কষ্ট হয়।
ট্রলার থেকে উঠার সময় অসুস্থ হালিমা বলেন, বাবারে এই ঘাট দিয়ে কিভাবে আমরা রোগী ট্রলারে উঠি এবং ট্রলার থেকে নামি বলতে পারেন। এমন ভাঙ্গা ঘাট দিয়ে কি উঠা নামা করা যায়। আমার স্বামীর ঘাড়ে ভর দিয়ে ট্রলার থেকে লাঠি ভর করে উঠছি বাবা জীবন বের হয়ে যাওয়ার মতো।
একই কথা বলেন পলাশ নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ঘাটের যে অবস্থা তাতে আমাদের চলতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। ঘাট সংস্কারসহ একটা পল্টুন দেওয়া খুবই দরকার।
ঘাটের ট্রলার মাঝি কামরুল বলেন, ঘাট সংস্কার না করায় ভাঙ্গা ঘাটের কারণে এই ঘাট দিয়ে যাত্রী উঠা নামা করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছে তাই ঘাটের জন্য পল্টুন এর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। জোয়ারের পানির চাপে বাঁশের সাঁকোর ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
তবে ঘাটে চলাচলরত যাত্রীরা জরুরি ভিত্তিতে এই ঘাটে একটি পন্টুনের ব্যবস্থা করে জনদুর্ভোগ থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবি জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিতাই জোর্দার বলেন, এটা আন্তঃজেলা খেয়াঘাট এই ঘাট দিয়ে সরকার বছরে প্রায় ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। আর সেই ঘাটে পন্টুন না থাকায় বাঁশের সাঁকো ঘাট দিয়ে ট্রলারে উঠতে হয় নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধদের।
এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসমত হোসেন বলেন, এ খেয়া ঘাটের দৈর্ঘ্যটা জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে। ইতিমধ্যে ৩৮০ ফিট পর্যন্ত দীর্ঘ আর সি সি ঢালাই করা ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। আরও প্রায় ২০/৩০ ফুট ঢালাই রাস্তা করলে যাত্রীদের পারাপারে আর কোন অসুবিধা হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি সরেজমিনে ঘাটটি পরিদর্শন করে যাত্রী ব্যবহারের বিশ্রামাগার ও ওয়াশ ব্লক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবার জন্য ঘাট তদারক কারিদের বলেছি।
খুলনা গেজেট/এনএম