আর মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। তবে ভ্যাপসা গরমে দিনের বেলা বাজার ফাঁকা থাকলেও রাতে বাড়ছে বেঁচা-কেনা। প্রচন্ড তাপদাহকে উপেক্ষা করে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় জেলার বিভিন্ন ঈদ বাজার গুলোতে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন অনেকে। গরমের কারনে দিনের বেলায় শহরের সুলতানপুর বড়বাজার সড়কসহ ফুটপাতের মার্কেট গুলো কিছুটা ফাঁকা থাকলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমলে ক্রেতাদের ভীড় থাকে। তবে অন্যান্য সব ধরনের মার্কেটে ভিড় বাড়ছে ইফতারের পর।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, আকর্ষণীয় পোশাকের সংগ্রহ রয়েছে প্রতিটি দোকানেই। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে মার্কেট ও বিপণি কেন্দ্র গুলো। দিনের বেলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমলগুলোতে ক্রেতা সাধারণের ভিড় থাকলেও উল্টোচিত্র ছোট দোকান এবং ফুটপাতের মার্কেট গুলোতে। এখানে আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছেন না দোকানীরা। ফলে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে এঅবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
অপরদিকে, বাইরে ভ্যাপসা গরম, সড়কে যানজট থাকার সুবাধে শপিংমলগুলোতে ভিড় বাড়ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ঈদের কেনাকাটার ভিড় করছেন এখানে। এতে, সকাল থেকে রাত পর্যস্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন শপিংমল গুলোর বিক্রেতারা।
সাতক্ষীরা বাজার কোলকাতা শপিং সেন্টারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আসাদুর রহমান জানান, প্রচন্ড তাপদাহ আর যানজটের কারনে জনজীবন অতিষ্ঠ। ফুটপাতের দোকান গুলোতে দরদাম করে নিত্যপণ্য সামগ্রী কেনা যায়। তবে এই গরমে সেখানে যেয়ে কেনাকাটা করা কষ্টকর। এজন্য তিনি এই শপিং সেন্টারে এসেছেন। এসময় লায়লা পারভীন নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, সড়কেরধাওে খোলা বা ফুটপাতের দোকানগুলোতে সব ধরণের সামগ্রী থাকেনা। পক্ষান্তরে শপিংমল গুলোতে বস্ত্র, জুতা, কক্সমেটিক্স, খাদ্যদ্রব্য সহ নিত্যপণ্য সামগ্রী পাওয়া যায়। এজন্য সময় বাঁচাতে এবং ভ্যাপসা গরম থেকে স্বস্তি সহকারে কেনাকাটা করতে তিনি ঈদ মার্কেট করার জন্য শপিংমলকে বেছে নিয়েছেন বলে জানান।
সোমবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতে ঈদের মার্কেট করতে আসা ভ্যান চালক আজিজুর রহমান বলেন, ভ্যান না চালালে সংসার চলেনা তার। দিনের বেলা ভ্যাপসা গরমে ভ্যান চালানোর পর আর ইচ্ছে করেনা ফুটপাতে এসে ছেলে-মেয়েদের জন্য কেনাকাটা করি। তবে, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের অবস্থানের সাথে শপিংমলটা শোভা দেখায় না। এজন্য কমদামে মার্কেট করতে ফুটপাত তাদের একমাত্র ভরসা। এসময় তিনি আরও বলেন, দিনের বেলা প্রচুর তাপদাহ চলে। তবে, সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কিছুটা কম হয়। এজন্য দিনের বেলা মার্কেট না করে সন্ধ্যায় মার্কেট করতে এসেছেন বলে জানান তিনি।
একই সময়ে ফুটপাতে ঈদ মার্কেট করতে আসা নাসরিন খাতুন নামে এক বেসরকারী চাকরিজীবী বলেন, খুব সামান্য বেতনে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। ঘরভাড়া বাবদ খুব সামান্য পরিমাণে অর্থ সাশ্রয় হয় তার। ইচ্ছে থাকলেও শপিংমলে যেতে পারেন না। সেটা সামর্থ্যের বাইরে বলে ফুটপাতে এসেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া, সাথে বিদ্যুৎয়ের দামও বেড়েছে। আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে গাড়িভাড়া। তবে, আমার মতো যারা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাদের বেতন আগের মতো রয়েছে। এতেকরে নিজ সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটানো, সংসারের খরচসহ আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়াতে জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে বিক্রেতারা জানান, এবারের ঈদে দেশি-বিদেশি সব ধরণের কাপড়ই বেচা-কেনা হচ্ছে। তবে প্রচন্ড গরমের জন্য সুতি শাড়ি, সুতি থ্রি-পিচ ও টি-শার্টের কদর একটু বেশি। ফুটপাতের বিক্রেতারা জানান, দিনের বেলা বেঁচা-বিক্রি সে অর্থে না হলেও সন্ধ্যার দিকে আবহাওয়া একটু নরম থাকাতে তাদের বেঁচা-কেনা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে, আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না বলে দাবি করেন তারা।
অপরদিকে ঈদের নতুন পোশাকের পাশিপাশি বিক্রি বেড়েছে আতর ও টুপি ও জুতার দোকানে। সন্ধ্যায় শহরের থানা মসজিদ এলাকায় কয়েকটি জুতার দোকান ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতারা ঈদের নতুন পোশাকের সাথে মিলিয়ে কিনছেন পছেন্দের জুতা ও স্যান্ডেল।
শহরের থানা মসজিদের সামনের শাহী সুন্নাতি আতর ঘরের মালিক মিম জানান, এবার ঈদের বাজারে ক্রেতাদের মাঝে আতরের চাহিদা অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। দিনের বেলায় তেমন বিক্রি না হলেও ইফতারের পর দোকানে ভীড় লেগেই থাকে। প্রায় সব ধরণের ক্রেতারাই কিনছেন বিভিন্ন ধরণের আতর ও টুপি। এবার তার বেচা বিক্রি বেশ ভাল বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা শহরের প্রিয় গোপাল শপিং মলের স্বত্তাধীকারি সত্য রঞ্জন জানান, গতবারের তুলনায় এবার বিক্রি ভাল। প্রায় সবধরনের ক্রেতারা এবার কমবেশি ঈদের কেনাকাটা করছেন। তার দোকানে সকাল থেকে রাত অদধি ক্রেতাদের ভীড় লেগে থেকে, কারণ এখানে তারা সাধ্যের মধ্য থেকে তাদের পছেন্দের পোশাক কিনতে পারছেন। এবার শাড়ি, থ্রি-পিচ, পাঞ্জাবী ও শিশুদের পোশাকের চাহিদা একটু বেশি। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও অনেক ক্রেতা তাদের পছেন্দের পোশাক কিনতে পাচ্ছেন না। তবে আমার দোকানে সব ধরণের ক্রেতাদের কেনাকাটার সুবিধা রয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এমএম