খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

টানা ছুটি শেষে স্থলবন্দর ‍খুললে কমবে কাঁচা মরিচের দাম

গেজেট ডেস্ক

ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ৬ দিনের ছুটি শেষে আগামী সোমবার (৩ জুলাই) থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি রফতানি বাণিজ্য শুরু হবে। ওইদিন থেকেই বন্দর দিয়ে পুনরায় ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হবে। ছুটি শেষে আমদানি শুরুর দিন বন্দর দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমানে কাঁচা মরিচ আমদানি হতে পারে। এতে করে দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কাঁচা মরিচের দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বন্দরের কাঁচা মরিচ আমদানিকারক।

শনিবার (১ জুলাই) সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি দামের বাজারে সব সবজির দোকানগুলোতে কাঁচা মরিচের সরবরাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গুটি কয়েক দোকানে কাঁচা মরিচ শোভা পাচ্ছে। বাড়তি দামের কারণে সব দোকানি কাঁচা মরিচ রাখছে না বলে জানিয়েছেন। বাজারে দুই প্রকারের কাঁচা মরিচ দেখতে পাওয়া গেছে। ভালো মানের কাঁচা মরিচ গতকালের মতই ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর কিছুটা নিন্ম মানের কাঁচা মরিচ ৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা নাজমুল হোসেন বলেন, কি আর বলব কাঁচা মরিচের দামের কথা বর্তমানে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে কাঁচা মরিচের দিকে তাকালেই ঝাঁজ লাগছে। তাতে করে কেনা তো দূরের কথা এটা কি সম্ভব যে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৫শ টাকা। ঈদের আগের দিন যে কাঁচা মরিচ আমরা ২৪০ টাকা কেজিতে কিনলাম। রাত পোহালেই সেই কাঁচা মরিচের দাম বাড়তি শুনতে পাচ্ছি। কাঁচা মরিচের দাম বাড়তে বাড়তে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। এভাবে যদি দাম বাড়ে তাহলে আমাদের মত মানুষদের কাঁচা মরিচ খাওয়া আর কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আমরা চাই দামটা যেন কমে তবেই কিনে খেতে পারব নচেৎ নয়।

হিলি বাজারের কাঁচামরিচ বিক্রেতা মমতাজ হোসেন, গরম ও প্রচন্ড খরার কারণে কাঁচামরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে করে বাজারে চাহিদার তুলনায় কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমের কারণে দাম উর্দ্ধমুখী। মোকামে প্রায় প্রতিদিনই কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে দামের কোনো স্থিতিশীলতা নেই। আমরা যখন যে দামে ক্রয় করছি সেই মোতাবেক বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি। ঈদের আগে দাম কম থাকলেও বর্তমানে মোকামেই কাঁচা মরিচ কিনতে হয় ৪শ টাকা কেজি দরে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ রয়েছে আবার নষ্ট রয়েছে সবমিলিয়ে আমরা ৫শ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি। আবহাওয়া ভালো হলে কাঁচা মরিচের সরবরাহ যদি বাড়ে সেক্ষেত্রে দাম কিছুটা কমতে পারে। সেই সঙ্গে বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচের আমদানি বাড়লে বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসতে পারে।

হিলি স্থলবন্দরের কাঁচামরিচের আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশিয় কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। এমন অবস্থায় সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ২৫ জুন আবারো ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেয় সরকার। আমদানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হিলি স্থলবন্দরের কয়েকজন আমদানিকারককে কয়েক হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। আইপি হাতে পাওয়ার পর এলসি খুলে ভারতীয় রফতানিকারকদের সেই কপি সরবরাহ করা হয়। এতে করে দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধের পর ২৬ জুন সোমবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়। আমদানিকৃত এসব কাঁচা মরিচ বন্দরে ২শ থেকে ২শ ২০টাকা কেজি দরে পাইকারিতে বিক্রয় করা হয়।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে এসব কাঁচা মরিচ ক্রয় করে নিয়ে যায়। একইভাবে ওই দিন দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়েও ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়। কিন্তু বন্দর দিয়ে একদিন আমদানির পরের দিন থেকেই ঈদের ছুটির কারণে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। হিলি স্থলবন্দরসহ দেশের সবগুলো স্থলবন্দর দিয়ে পর্যায়ক্রমে ৫ থেকে ৬ দিন আমদানি রফতানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একারণে ওই সময়ে বন্দর দিয়ে কোন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়নি। ঈদের ছুটি শেষে সোমবার থেকে আবারো বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি শুরু হবে। ওই দিনই বন্দর দিয়ে আবারো ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হবে। দেশের বাজারে বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে আইপি পাওয়া বন্দরের আমদানিকারকরা সকলেই কম বেশি কাঁচা মরিচ আমদানি করবেন। এতে করে ওই দিন পর্যাপ্ত পরিমানে কাঁচা মরিচ দেশে আমদানি হতে পারে। যার কারণে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসতে পারে।

তিনি আরো বলেন, দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের সররবাহ স্বাভাবিক রাখতে ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমাদনি করছি। কিন্তু যে কারণে দেশে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম ঠিক একই কারণে ভারতেও এবারে কাঁচা মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহ কম রয়েছে। যার কারণে বর্তমানে ভারতের মোকামেই কাঁচা মরিচের দাম উর্দ্ধমুখী। যে কাঁচা মরিচ আমরা ঈদের বন্ধের আগে ১শ থেকে ১শ ১০ রুপিতে আমদানি করলাম। রফতানি শুরু হওয়ায় সেই কাঁচা মরিচ কেজিতে আরো ৩০ থেকে ৪০ রুপি করে বেড়েছে। তাতে করে বর্তমানে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ ক্রয় করতে আমাদের ১৪০ রুপি করে লাগছে। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া খরচ হিসেব করে দাম বেশিই পড়ছে। এছাড়া এক কেজি কাঁচা মরিচ আমদানিতে সরকারকে শুল্ক দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। সবমিলিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানিতে পড়তা পড়ছে ২৪০ টাকা। তাতে করে ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি সম্ভব নয়। যার কারণে দেশে কাঁচা মরিচের দাম খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই। যদি কাঁচা মরিচের আমদানি শুল্কটা কমানো হয় তাহলে মানুষ কিছুটা কম দামে কাঁচা মরিচ খেতে পারতো বলেও জানিয়েছেন তিনি।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বন্দরের আমদানি রফতানিকারক ও সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা বৈঠক করে ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬ দিন বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি রফতানি বানিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে। ছুটি শেষে আগামী সোমবার (৩ জুলাই) থেকে বন্দর দিয়ে পুনরায় দু’দেশের মাঝে পণ্য আমদানি রফতানি বাণিজ্য শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের সংগনিরোধ রোগতত্ববিদ শামীম আহমেদ বলেন, গত ২৫ জুন ভারত থেকে আবারো কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। গত ২৬ জুন পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের ৭ জন আমদানিকারক ৩ হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পান। সেই মোতাবেক ২৬ জুন থেকেই আবারো হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়। আমদানিকৃত এসব কাঁচা মরিচ পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দ্রুত সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছে যাতে আমদানিকারকরা বন্দর থেকে দ্রুত খালাস করে নিতে পারেন। ঈদের ছুটির কারণে অফিস বন্ধ রয়েছে আগামীকাল রোববার অফিস খুললে বোঝা যাবে বন্দরের আরো কোনো আমদানিকারক কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন কিনা।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!