খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

জলাশয় সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা কেডিএ ভরাট করছে নিরালা দিঘীর একাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় গত মার্চ থেকে নলকূপে পানি উঠছে না। কম শক্তির মোটর দিয়েও ভূগর্ভ থেকে পানি তোলা যায় না। শুষ্ক মৌসুমে পানির এই সংকট হয় প্রতিবছর। ব্যতিক্রম শুধু নগরীর নিরালা আবাসিকের দিঘিরপাড় এলাকা। সারা বছরই এখানে নলকূপে পানি পাওয়া যায়। গত এপ্রিলে দীর্ঘ তাপপ্রবাহে মানুষের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখনও তুলনামূলক স্বস্তিতে ছিলেন দিঘির পাড়ের বাসিন্দারা। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।

মানুষের মাঝে স্বস্তি এনে দেওয়া দিঘিটি ছোট করে ফেলছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। এটির একাংশ ভরাট করে প্রশস্ত করা হচ্ছে সড়ক। চলতি মাসের শুরুতে দিঘিতে লাঠি পুঁতে লাল নিশান টানানো হয়েছে। এখন চলছে বালু ফেলার কাজ।

কেডিএ থেকে জানা গেছে, তিনটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নগরীর ভেতরে পুরোনো তিনটি সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। প্রায় ৭১৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের প্রথম সড়কটি নিরালা মোড় থেকে ১ নম্বর সড়ক হয়ে দিঘির পাশ দিয়ে শহর বাইপাস (রূপসা সেতু অ্যাপ্রোচ) সড়কে গিয়ে মিশবে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ৬০ ফুট চওড়া এবং চার লেন হবে।

দিঘির এক পাশে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কবরস্থান। এই কবরস্থান যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এ জন্য ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের উড়াল সড়ক নির্মাণ করছে কেডিএ। উড়াল সড়ক পর্যন্ত পৌঁছানোর পুরোনো সড়কটি এখন প্রশস্ত করা হবে। এ জন্যই ভরাট হচ্ছে দিঘির একাংশ।

সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পুরোনো সড়কের একপাশে দিঘি, অন্যপাশে কিছু ব্যক্তিমালিকানার জায়গা ও কবরস্থান। সড়ক প্রশস্ত করতে দিঘির ভেতরে লাঠি পুঁতে লাল নিশান টানানো হয়েছে। ১৫০ থেকে ২০০ ফুট লম্বা দিঘির ১২ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত ভরাট হবে। এরই মধ্যে পূর্বপাশে বালু ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। দিঘির এক প্রান্তে উড়াল সড়কের পাইপ বসানোর কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। নির্মাণকাজের সামগ্রী পরিবহনের কারণে সড়ক দেবে ও ধসে গেছে।

দিঘি ভরাট নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী ও নাগরিক নেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই; কিন্তু অবশ্যই সেটা কৃষিজমি, জলাশয় ও পরিবেশ রক্ষা করে। মাত্র এক মাস আগে গরমে সবাই যখন অস্থির, তখন কেডিএ কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে জলাশয় সংরক্ষণ, খোলা জায়গা বৃদ্ধি ও বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কিন্তু নিজেরা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসব কিছুই মানছেন না।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, দেশে সবাই এখন বড় অঙ্কের প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে। একটি সড়কের জন্য ৬০ কোটি টাকার উড়াল সড়ক নির্মাণ ও দিঘি ভরাটের বিকল্প ছিল কিনা, তা যাচাই করা উচিত ছিল।

এ ব্যাপারে কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও তিনটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোর্ত্তজা আল মামুন বলেন, আমরা দিঘি ভরাট নয়, উন্নয়ন করছি। দিঘির পাড়ে নতুন রিটেইনিং ওয়াল হবে, দৃষ্টিনন্দন গ্রিল হবে। এই কাজের জন্য কিছু অংশে বালু ফেলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, দিঘি ভরাট না করলে ব্যক্তিমালিকানার জায়গা অধিগ্রহণ করতে হতো। এতে খরচ পড়ত বেশি। এ ছাড়া দিঘির বিপরীত পাশে কবরস্থান। সেদিকে সড়ক প্রশস্ত করার সুযোগ ছিল না। এই সড়ক নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দিঘির বিষয়ে কেউই আপত্তি দেয়নি। কবরস্থানের বিষয়ে কেসিসির আপত্তি থাকায় সেখানে উড়াল সড়ক নির্মাণ হচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/হিমালয়




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!