মাটির মানুষ মাটির কাছে চলে যায়। মৃত্যুর পর বেচে থাকে কর্মের মাধ্যমে। তেমনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জাগতিক মায়া ছেড়ে বিদায় নিলেন যোবায়ের ও তার চাচাতো ভাই শাহারিয়ার। বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ দু’টি বের করার পর মোজাম্মেল ও তার ছোট ভাই শহীদুলের নিরবতা ভেঙ্গেছে। তাদের দু’ভাইয়ের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তাদের চোখের পানি দেখে জানাজায় উপস্থিত কেউ চোখে পানি চেপে রাখতে পারেনি। জানাজা শেষে দু’ভাইয়ের লাশ নিরালা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দুপুর সাড়ে ১২ টার সময় জুমা নামাজের আযানের পর যোবায়ের ও শাহারিয়ার এর লাশ জানাযার জন্য বাড়ি থেকে বের করা হয়। এ সময় তাদের দু’জনের মা বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলেন। শেষ বারের মতো বিদায়ের জন্য। বিদায়ের সুরটা ছিল ভিন্ন রকমের। তারা বলছিলেন বাবাকে আর কোনদিন কাছে পাওয়া যাবেনা। গালে তুলে ভাত খাইয়ে দেওয়া হবেনা। আদর করা হবেনা। আর কোন দিন তারা আমাদের মা বলে ডাকবেনা। এ সব কথা শুনে উপস্থিত কেউ কান্না ধরে রাখতে পারেনি।
দুপুর পৌনে দু’টার দিকে পূর্ব বানিয়াখামার খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাদের দু’জনের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় এলাকার বয়োবৃদ্ধ থেকে সকল বয়সী মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। এর আগে মরদেহ পরিবহন করার জন্য সেখানে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দু’টি গাড়িকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। জানাযা শেষে তাদের মরদেহ দু’টিকে নিরালা কররস্থানের দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
২৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন বলেন, ছেলে দু’টি আমাদের সামনে বড় হয়েছে। তাদের মৃত্যু যে এভাবে হবে তা কখনও ভাবিনি। তিনি জানাযায় উপস্থিত সকলকে তাদের ভাইয়ের ভুল-ত্রুটির জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। আল্লাহর কাছে দোয়া চান। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে শোক সামলানোর জন্য পরিবারকে শান্তনা দেন।
বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ মোটরসাইকেল যোগে চাচাতো ভাইয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দু’ভাই। দুপুরের খাবার শেষে সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। বিকেল ৪ টার দিকে তারা খুলনা-মাওয়া সড়কের রাজপাট নামক স্থানে পৌছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী একটি বাস তাদের ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় তাদের মোটরসাইকেল গাড়ির নিচে চলে যায়। চাক্কায় পৃষ্ট হয়ে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। গাড়িটি তাদের মরদেহ ১শ’ গজ টেনে নেয়। পরে চালক ও হেলপার গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়।