যশোরের বাঘারপাড়ায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করার সময় চারজনকে গণপিটুনি দিয়েছেন জনগণ। পরে তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল, পুরাতন ক্যামেরা, পরিচয়পত্র ও অ্যাসাইমেন্টের ভুয়া কপি উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার উপজেলার খাজুরা বাজারে এ ঘটনাটি ঘটে।
গণপিটুনির শিকার কথিত সাংবাদিকরা হলেন, দলনেতা সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া গ্রামের হিরণ শেখের ছেলে নুরুদ্দিন (২৮), একই উপজেলার কলসেরকান্দি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৫), রাজধানীর বংশালের আগামাছি লেনের মঞ্জুর হোসেনের ছেলে এসএম শাহজাহান (৪২) এবং যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া মেঠোপাড়া গ্রামের কিসমত দফাদারের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা ডলি (২৮)।
ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অভিযুক্তরা খাজুরা বাজারের আশার আলো সমবায় সমিতিতে গিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেন। তারা বলেন, আমরা ঢাকা অফিস থেকে অডিটে এসেছি। সমিতির কাগজপত্র বের করেন যাচাই-বাছাই করবো। এ সময় ওই সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও অফিস অডিটের অনুমতিপত্র দেখাতে বললে তারা ঘাবড়ে যান। সন্দেহ হলে সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও সভাপতি খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেন। পুলিশ আসার আগে স্থানীয় জনতা খবর পেয়ে অভিযুক্তদের গণপিটুনি দেয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ওই চারজনকে আটক করে পুলিশ।
এর আগে বুধবার স্বপ্নের সেতু, সাহসী ও খাজুরা সমবায় সমিতিতে গিয়ে তারা সংবাদ প্রকাশ ও লাইসেন্স বাতিলের ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
আশার আলো সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, অফিসে এসে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করি। তাৎক্ষণিক আমি সমিতির সভাপতি সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলাকে ফোন করে ডাকি। এ সময় তারা অফিস অডিটের (অ্যাসাইমেন্ট কপি) একটি ভুয়া অনুমতিপত্র দেখায় আমাদের। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা সবাই ঘাবড়ে গেলে আমরা পুলিশকে খবর দিই।
স্বপ্নের সেতু সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক উজ্জ্বল নন্দী অভিযোগ করে বলেন, বুধবার সকালে তারা অফিসে এসে খাতাপত্র দেখে বলে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এ সময় সমিতির লাইসেন্স বাতিলের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা নেয় তারা।
এছাড়া, এদিন একই কৌশলে অভিযুক্তরা সাহসী সমবায় সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা ও খাজুরা সমবায় সমিতি থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ওই দৈনিকের সম্পাদক ও প্রকাশক রেজাউল ইসলাম মোবাইলে বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। তাদেরকে পত্রিকা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, সারাদেশের সমবায় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য সংগ্রহ ও সচিত্র প্রতিবেদন তৈরির জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র নিয়েছি। সেই প্রেক্ষিতে ওই চারজনকে পাঠানো হয়েছিল। তবে ওই পত্রের (অ্যাসাইমেন্ট কপি) কোথাও মন্ত্রণালয়ের সচিবের কোন সিল বা স্বাক্ষর খুঁজে পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দীন জানান, আটকদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা প্রকৃত সাংবাদিক কিনা সেটিও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।