খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা খানজাহান আলী হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ইলিয়াজ ফকির নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর পরপরই হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকরা পালিয়ে যান। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পুলিশ হাসপাতালটি ঘিরে রেখেছে। দাকোপ উপজেলার জয়নগর গ্রামের হাবিবুর রহমান ফকিরের ছেলে রোগী ইলিয়াজ।
নিহতের স্ত্রী পারভীন বলেন, পাঁচ মাস আগে ইলিয়াজ ফকিরের হার্নিয়ার সমস্যা হয়। সে সময় তিনি ওই এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসককে দেখাতে থাকে। সাথে ঔষধ গ্রহনও করে। তাতে সমাধান না হওয়ায় তিনি নগরীর মোহাম্মাদ নগরের ফার্মাসিস্ট মনির সাথে কথা বলেন। তখন ইলিয়াজকে খানজাহান আলী হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আজ রোববার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর একটার দিকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে আনা হয়। বিকেল চারটা ৫৫ মিনিটের দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোস্তফা কামাল, ডা. মোর্শেদ ও ইন্টার্ণী ডা. মোহন রোগীকে অপারেশনের জন্য কক্ষে প্রবেশ করেন। অস্ত্রপ্রচার সফল হয়েছে বলে চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের জানান। এর কিছুক্ষণ পর ইলিয়াজ ফকিরের এক আত্মীয় গিয়ে দেখে তার খিচুনী উঠেছে। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে নিহতের পরিবারের এক সদস্যকে ডেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক সটকে পড়েন।
নিহতের বেয়াই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হার্নিয়া অপারেশনে কোন রোগী মারা যায় না। রোগীর কথা জিজ্ঞাসা করা মাত্রই হাসপাতালের পরিচালক ও অন্যান্য চিকিৎসকরা একে একে সটকে পড়তে থাকেন। অপরেশন থিয়েটারের মধ্যে ইলিয়াজকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসে।
এখানে প্রায় এ রকমের দুর্ঘটনা ঘটে। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরও কেন মানুষ এখানে আসে তা বোধগম্য নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খানজাহান আলী হাসপাতালের এক প্রতিবেশী জানান, এখানে প্রায় এ রকমের দুর্ঘটনা ঘটে। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরও কেন মানুষ এখানে আসে তা তার বোধগম্য নয় বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
রাতে খানজাহান আলী হাসপাতালে গিয়ে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দেখতে পাওয়া যায়নি। অপারেশনের লাইট ও অক্সিজেন চলতে দেখা যায়।
এ ঘটনায় পুলিশ হাসপাতালের হিসাব রক্ষক ও একজন সেবিকাকে আটক করেছে। স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
রাত ৯ টা ১৬ মিনিটে নিহত ইলিয়াজ ফকিরের লাশ ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে পুলিশ।
এদিকে খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো: আবু হানিফ জানান, ইলিয়াজ ফকিরের মৃত্যুর পর আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালের দু’জন কর্মচারীকে আটক রেখেছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে থানায় নেওয়া হয়েছে এবং এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপারেশন থিয়েটারের মধ্য থেকে আবু নাসের হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মোর্শেদের একটি নির্দেশনাপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ভুল চিকিৎসায় নিহত ইলিয়াজ ফকির নগরীর গল্লামারী রাইসা ক্লিনিকের পাশে ফলের ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে।
খুলনা গেজেট/এএ/এস আই