আশির দশকে বৃহত্তর খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সিরাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ পাচ্ছেন। আজ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ হতে দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বহু ঐতিহাসিক গ্রন্থের লেখক সিরাজউদ্দিন আহমেদ খুলনা থাকাকালে ‘জেলা পরিষদ হতে খুলনা জেলা’ নামক গ্রন্থ প্রকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। খুলনাতে তিনি ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালের শেষ ভাগ পযর্ন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি খুলনায় অনেকগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাও করেন।
ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বরগুনা মহাকুমা প্রশাসক থাকাকালে বিদ্রোহ করে তৎকালিন সরকারের অধীনে চাকুরী না করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
সিরাজউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসনের সদস্য ছিলেন। তিনি বরগুনা মহাকুমার এসডিও, বৃহত্তর খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালযের উপ-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালযের যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি অর্থনীতি ও প্রশাসনিক বিষয়ে অষ্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তিনি জাতিসংঘ ও সার্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৩ সালে ১৪ অক্টোবর তাঁর কর্মকাল শেষ করেন।
তিনি জাতীয় মহিলা উন্নয়ন নীতি খসড়া নীতির প্রণেতা। তিনি বাবুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠতা। বরিশাল বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। বরগুনা জেলার উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে জেলার জনগণ বরগুনার টাউন হলের নামকরণ করেছেন সিরাজউদ্দিন মিলনায়তন। দীর্ঘদিন বরিশাল বিভাগ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলাদেশ সময় পত্রিকার উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রণয়ন কমিটির সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্ণর, বোর্ড অব গভর্ণর ছিলেন। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন।
ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহমেদ ১৯৪১ সালে ১৪ অক্টোবর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদ পাশা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জাহান উদ্দিন ফকির, মাতা লাইলি বেগম। পাঁচ বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। শায়েস্তাবাদ হাইস্কুল থেকে ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৫৮ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৬০ সালে বিএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এমএ এবং ১৯৬৮ সালে এলএলবি পাস করেন।
সিরাজউদ্দিন আহমেদ বরিশালের ইতিহাস ৩ খন্ড, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, বাংলাদেশ গড়লেন যারা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জননেত্রী শেখ হাসিনা, মাদারীপুর জেলার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা জেলা, ভারত বিভাগ ঐতিহাসিক ভুল সহ অসংখ্য বইয়ের রচয়িতা ।
সিরাজউদিন আহমেদের স্ত্রী মরহুম অধ্যাপিকা বেগম ফিরোজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার দুই পুত্র প্রকৌশলী শাহরিয়ার আহমেদ শিল্পী ব্যবসায়ী এবং জ্যেষ্ঠপুত্র সাকিল আহমেদ ভাস্কর এবং পুত্রবধূ ফারজানা জেসমিন বাংলাদেশ সরকারের উপ-সচিব পদে কর্মরত ।
খুলনা গেজেট/এএ