খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩১৬

খুলনায় বে‌ড়ে‌ছে ‘নাইট ক্রাইম’, উ‌দ্বিগ্ন নাগরিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত একমাসের অধিক সময়ে খুলনা নগরীতে সন্ত্রাসীর হাতে দু’জন খুন এবং একজনের অঙ্গহানি ও দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার বেশিরভাগই ঘটেছে সন্ধ্যার পর। যেটাকে বলা হচ্ছে ‘নাইট ক্রাইম’। পুলিশ প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার কারণে খুলনায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে বলে নগরবাসীর অভিযোগ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পলাতক ও জেলে থাকা চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী খুলনায় ফিরেছে। আধিপাত্য বিস্তারের লক্ষে তারা সঙ্গে নিয়েছে কিশোর গ্যাং, বখাটে ও উঠতি সন্ত্রাসীদের। গত একমাসের বেশি সময়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। আধিপাত্য বিস্তারের জন্য তারা পাড়া মহল্লায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের ভুমিকায় সন্তুষ্ঠ নয় নগরবাসী।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, মাদক কারবারির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে স্থ‌ানীয় এক সন্ত্রাসীর সা‌থে বি‌রোধ হয় শেরে এ বাংলা রো‌ডের আমতলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের ছেলে রাসেল ওরফে পঙ্গু রাসেলের। তাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে ঐ সন্ত্রাসী। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ নভেম্বর রাতে ফোনে তাকে ডেকে জিরোপয়েন্টে নেওয়া হয়। খাবার খাইয়ে রাত ৩ টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানার কুবা মসজিদ গলির সম্মুখে এনে তাকে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই হত্যাকান্ডটি ঘটনায় তারা।

একই রাতে বাড়িতে যাওয়ার পথে কমার্স কলেজের কা‌ছে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হন খুলনা জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো: হাবিবুর রহমান বেলাল। এরপর ৩০ ন‌ভেম্বর রাতে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য সচিব আমির হোসেন বোয়িং মোল্লা। এরপর হাসপাতালে ৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তি‌নি। থানায় মামলা দায়ের হওয়ার পরও কোন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার বা আটক না হওয়ায় হতাশ পরিবারের সদস্যরা।

নাজিরঘাট এলাকার বাসিন্দা ইউনুস। তিনি এক সময়ে মাদক কারবারের সাথে জড়িত ছিলেন। মাদক কারবার ছেড়ে দিয়ে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। মাদক বিক্রির জন্য সন্ত্রাসীরা ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু রাজি না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা তাকে নাজিরঘাট এলাকার বাড়ি থেকে ডেকে ৩ ডিসেম্বর রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। কিন্তু লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

১২ ডিসেম্বর রাতে নগরীর লবণচরা থানাধীন একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে সন্ত্রাসীরা রেজা শেখের ওপর হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় রেজা শেখ তার বাম পা হারান। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।

সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর রাতে মিয়াপাড়া বন্ধনের মোড়ে আড্ডারত ছিলেন যুবক আকাশ। কিছু বুঝে ওঠার আগে সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে লক্ষ্য করে পরপর ২ টি গুলি করে। একটি গুলি তার কোমরের পেছনে বিদ্ধ হয়। বর্তমানে তিনি খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিবার থেকে জানানো হয় পূর্বে তার পিতা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার পর তার পরিবারের সদস্যরা আতংকিত রয়েছেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে পরিবারের এক সদস্য বলেন, মামলা করে আগেও কোন লাভ হয়নি এখনও হবেনা।

এদিকে খুলনায় ‘নাইট ক্রাইম’ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর এ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ৫ আগষ্টের আগে পুলিশের যে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছিল তা থেকে তারা এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। তাদের মধ্যে বিব্রতকর অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। পাশাপাশি জনগণের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশ সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে অপরাধ কমে আসবে।

সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা খুলনা গেজেটকে বলেন, ইদানিং খুলনায় অপরাধ প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরাধী যত বড় হোক না কেন তাদের কঠোর হস্তে দমন করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।

জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনের সকল চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আমরা সফলতা পেয়েছি এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছি।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শহরে প্রবেশ করার অনেক পথ রয়েছে। সন্ত্রাসীরা হঠাৎ নগরীরতে প্রবেশ করে কার্যক্রম চালিয়ে সটকে পড়ে। তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার নানা কৌশল অবলম্বন করছে। এটা যেন সন্ত্রাসীরা না করতে পারে আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অচিরেই এ সব সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম বন্ধ হবে বলে তিনি আশাবাদী।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!