নানা আয়োজনে মধ্যে দিয়ে বুধবার (১৩ মার্চ) কটকা ট্রাজেডি স্মরণে পালিত হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস। ২০০৪ সালের এ দিনে সুন্দরবনের কটকায় সফরে গিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন এবং বুয়েটের ২ জনসহ মোট ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়ে শাহাদতবরণ করেন। সেই থেকে প্রতিবছর দিনটিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে সকাল ১০টায় কালোব্যাজ ধারণ করে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বর থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি শোকর্যালি শুরু হয়ে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবন ঘুরে কটকা স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। এর পরপরই কটকা স্মৃতিস্তম্ভে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধানসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্ট ও বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপত্য ডিসিপ্লিন, সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন, আবাসিক হলসমূহ, শিক্ষক সমিতি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
পরে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এক শোক সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়ে শাহাদত বরণকারী শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে শাহাদত বরণকারী শিক্ষার্থীদের সহপাঠীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের দুইজন অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ উপহার দেওয়া হয়।
শোক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, মানুষের স্মৃতি সবসময় বিরাজমান। এর মাধ্যমে পুরনো কথা জাগ্রত হয়। আজকের এদিনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে যেভাবে অ্যালামনাইরা দাঁড়িয়েছেন, তা একটি মহৎ কাজ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন থাকবে, কটকার শোকাবহ পরিবেশ ততদিন থাকবে।
স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. শেখ সিরাজুল হাকিমের সভাপতিত্বে শোক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। স্বাগত বক্তৃতা করেন স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. শেখ মারুফ হোসেন। স্মৃতিচারণ করেন শাহাদত বরণকারী শিক্ষার্থীদের সহপাঠী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ’৯৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী শরিফ উদ্দিন ও আসাদুজ্জামান চৌধুরী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী সামিয়া সুহাইদা তাজিয়া ও সীমান্ত সাহা রাহুল।
এ সময় সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শাহাদত বরণকারীদের ৭ জন সহপাঠী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বাদ জোহর শাহাদতবরণকারী শিক্ষার্থীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন জামে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বাদ মাগরিব এতিমদের সাথে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এএজে