দেড় দশক পর ৪ ডিসেম্বর খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে শীর্ষ তিনটি পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের বৃহৎ আকৃতির নিজেদের ছবি সম্বলিত রং বেরঙের প্যানা, ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টার।
খানজাহান আলী থানার রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ফুলবাড়িগেট এবং শিরোমনি এলাকায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের বড় বড় প্যানা, ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়ীগেটে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। যেখানে শোভা পাচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খুলনা-৩ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের ছবি। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কর্মীরা ব্যাপকভাবে উচ্ছ্বসিত এবং উজ্জীবিত হয়েছে।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর দলীয় এ সম্মেলনকে শতভাগ সফল এবং বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিতির লক্ষ্যে সংগঠনের থানা আহবায়ক কাজী মিজানুর রহমান, সদস্য সচিব আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাসসহ আহ্বায়ক কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে থানা বিএনপি’র নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমর্থিত দলের একটি বিরাট অংশ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমাদানের শেষ দিন থাকলেও মহানগর দলীয় কার্যালয় থেকে এ গ্রুপের কেউ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য ফরম সংগ্রহ করেন নাই।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে ১৬ নভেম্বর সর্বশেষ খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মীর কায়ছেদ আলী ও শেখ আমজাদ হোসেন।
৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে মহানগর দলীয় কার্যালয়ের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে গতকাল শুক্রবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমাদানের শেষ দিনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সংগঠনিক সম্পাদক শীর্ষ তিনটি পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশী ৯ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ এবং জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে সভাপতি পদে দুইজন হলেন সংগঠনের থানা কমিটির আহবায়ক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী মিজানুর রহমান ও আহবায়ক কমিটির সদস্য থানা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনামুল হাসান ডায়মন্ড। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান থানা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস ও থানা আহবায়ক কমিটির সদস্য ও খানজাহান আলী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোল্লা সোহরাব হোসেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রত্যাশী পাঁচজন হলেন বর্তমান থানা আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ এমদাদুল হক, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সদস্য মোল্লা সোহাগ হোসেন, মোঃ ফরহাদ হোসেন ও মীর মনিরুল ইসলাম সংগ্রাম।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র একটি বৃহৎ অংশ নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমর্থিত। এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন খানজাহান আলী আলী থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক যোগীপোল ইউপি চেয়ারম্যান মীর কায়ছেদ আলী। দলের দুঃসময়ের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতা হিসেবে যিনি এলাকার দলীয় নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের মাঝে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। টানা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। তার বাড়িতে হামলা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৩৭ টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মীর কায়ছেদ আলী খুলনা গেজেটকে বলেন, দলের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ রেখে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি দুই গ্রুপ একত্রিভূত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে দল বেশি শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত হবে। তাছাড়া বিএনপি তো ভোটের রাজনীতি করে।
তিনি বলেন, খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র দীর্ঘদিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত মূল নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে দলের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দিয়ে সম্মেলনের কোরাম পূরণ করা হচ্ছে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, দল যদি সিদ্ধান্ত দেয় সে ক্ষেত্রে আমরা যারা আছি সম্মেলনে অংশ নিব। তাছাড়া খুব শীঘ্রই আমরা খুলনা বিভাগের সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিল’র সদস্য আমান উল্লাহ’র সাথে সাক্ষাৎ করে আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে সেগুলি তার কাছে উপস্থাপন করব। তিনি যদি আমাদের সম্মেলনে অংশ নিতে নির্দেশ দেন তাহলে আমরা সম্মেলন অংশ নিব।
সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, সম্মেলন সফল করার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিতির টার্গেট নিয়ে আমরা কাজ করছি।
সদস্য সচিব আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শীর্ষ তিনটি পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশী ৯ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে নজরুল ইসলাম মঞ্জু গ্রুপের কেউ ফরম সংগ্রহ করেন নাই।
সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সম্মেলনের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বাকি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে ইনশাআল্লাহ।
খুলনা গেজেট/এনএম