খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  জিম্বাবুয়েকে ৯ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ
  হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ ১১ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের : হাব
  টাঙ্গাইলের কা‌লিহাতী‌তে কাভার্ডভ্যান-ট্রা‌ক সংঘ‌র্ষে চালক নিহত
মুজিববর্ষে ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিবন্ধী সালাম

‘খাই আর না খাই শুকনো জাগায় ঘোম পড়ি’

ফুলতলা প্রতিনিধি

‘খাই আর না খাই অন্ততঃ শুকনো জাগায় ঘোম পড়ি। আল্লাহ বেহেস্তে দিক আমার জন্মদাতা বাপ-মারে। তারা আমারে জন্ম দিছে। শেলার (শ্যাওলা) মত ভাসে বেড়াতিলাম। কিন্তু ইউএনও স্যারের দয়ার নজর পড়ায় সরকারি পাকা ঘর পাইছি। এই ঘর তো শুধু মনে মনে স্বপ্নে দেখতাম। সেই স্বপ্নে দেখা ঘর যে এত তাড়াতাড়ি আমার হবে তা কোন সময় ভাবিনি। এই ঘরের হাতনেই (বারান্দায়) বসে যহনে নামাজ ফড়ে আল্লার কাছে হাত তুলি তহনই আমার মরা বাপ-মা, বঙ্গবন্ধু আর ইউএনও স্যারের ছবিড়া যেন আমার সামনে ভাসে উঠে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। তাগে জন্যি দোয়া করি।’ হৃদয়ের আবেগ থেকে আনন্দাশ্রু ঝরিয়ে এ অনুভূতি ব্যক্ত করেন মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমিসহ বাড়ি পাওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক কাজী আঃ সালাম (৩৫)।

মুজিব শতবর্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৩ জানুয়ারী সারাদেশে একযোগে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও গৃহ হস্তান্তর করা হয়। তারই অংশ হিসেবে খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ৪৬ পরিবারকে ২ শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়। এ সময় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আটরা গিলাতলা ইউনিয়নে ৩টি, দামোদর ইউনিয়নে ১৭টি, জামিরা ইউনিয়নে ৩টি এবং ফুলতলা ইউনিয়নে ২৩টিসহ মোট ৪৬ উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমির কবুলিয়াত দলিল, নামজারি খতিয়ান, খাজনা প্রদানের দাখিলা ও ঘর প্রদানের সনদ হস্তান্তর করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, “মুজিবশত বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য দুই শতাংশ খাস জমিসহ গৃহ নির্মাণ কর্মসূচির নির্দেশনা পেয়ে “ক” তফসিলভুক্ত খাস জমি উদ্ধার এবং প্রকৃত অসহায় ও উপকারভোগীদের বাছাই করাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। খাস জমি উদ্ধার কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুলী বিশ্বাস এবং প্রকল্প সচিব উপজেলা পিআইও মোঃ রফিকুল ইসলামকে সাথে নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটতে হয়েছে খাস জমি চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার এবং উপকারভোগীদের তালিকা প্রনয়ণে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ থেকে দেয়া ঘরের ডিজাইন, নির্মান সামগ্রী ও উপকরণের মাত্রা এবং নির্মানের মেয়াদ দিয়ে দেয়া হয়। ঘর প্রতি বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের মুনাফা লুটে নেয়ার সুযোগ নস্যাৎ করে নিজেদের তত্ত্বাবধানে রেখে সঠিক উপকরণের সমন্বয়ে মানসম্মত ঘর নির্মান করা হয়। আবার টাস্কফোর্স গঠন করে অসহায় ২শ’ জনের তালিকা থেকে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে ৪৬জন উপকারভোগীকে ঘর হস্তান্তর করা হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারের সকল নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নই আমার কাজ। তবে প্রকৃত অসহায়দের মাঝে ঘর প্রদান কর্মসূচিটাকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে আমি অন্তরে লালন করি । রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের কবল থেকে খাস জমি উদ্দার করতে গিয়ে অনেক সময় হুমকি ও উর্দ্ধতন মহলের তদবির উপক্ষো করে পুলিশের সহযোগিতা নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসিল্যান্ড রুলী বিশ্বাস।

ফুলতলা বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সরেজমিনে গাড়াখোলা মুক্তেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে গিয়ে দেখা যায় এখানে রয়েছে ৪টি ঘর। উপকারভোগীরা প্রতিবন্ধী এবং ভিক্ষুক। ফুলতলা-জামিরা সড়ক সংলগ্ন মুক্তেশ্বরী দিঘির দক্ষিণ সীমানায় নির্মাণ করা হয় ২টি ঘর।

এখানে কথা হয় উপকারভোগী ৮০ বছর বয়সী শামছুর সানার সাথে। স্ত্রী গহরজান বেগমকে নিয়ে তার বসবাস। তাদের দুই মেয়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। পাশ্ববর্তী বিলডাকাতিয়ার খাল ও আশপাশের বাগান থেকে বিভিন্ন ধরণের শাক সবজি ও শাপলা, কলমি লতা সংগ্রহ করে বাজারের বিক্রিই তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। দু’দশক আগে সুন্দরবন উপকূলীয় কয়রা এলাকা থেকে বন্যায় গৃহহারা হয়ে আশ্রয়ের তাগিদে এ এলাকায় ভেসে বেড়ানো শামছুর সানা পেয়েছেন স্বপ্নের ঠিকানা।

একযুগ আগে ফুলতলার নতুনহাট এলাকায় নরসুন্দরের কাজ করতেন ভূমিহীন মনিন্দ্রনাথ শীল। স্ত্রী আলো শীলসহ ৪ কন্যাকে রেখে অকাল মৃত্যু হয় তার। ৪ মেয়ে নিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে আলো শীলের। অন্যোর বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে দিন মজুরের কাজ করে কোন মতে সংসারের ঘানি টেনে দুই মেয়েকে বিয়ে দেন তিনি। অসহায়ত্বের কাছে হার মানা আলো শীলের সম্পা শীল এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং পূর্ণিমা শীল ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। অনুসন্ধানী চোখে যাচাই কমিটির দৃষ্টি কেড়ে আলো শীলের ঠিকানা মিলেছে দামোদর মন্দিরের পিছনে আলোর ভূবনে।

গত ৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ মহিবুল হাসান উপজেলার হাস্তান্তরকৃত আশ্রায়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘর পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ঘরের গুনগত মানের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অনুরুপ খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেনসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ পরিদর্শনে এসে ঘরের মান এবং উপকারভোগী বাছাইয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!