কালের বিবর্তনে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের গাছ, রস ও গুড়। বৃহত্তর যশোর তথা যশোর,নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনেদাহ এলাকায় পরিপূর্ণ ছিলো খেজুর গাছে। আজ তা বিলুপ্তির পথে।
ভারত উপমহাদেশ ব্যাপি এই খেজুরের গুড় ও রস ছিল সর্বজন সমাদৃত। শীতের আগমনে গাছিরা ব্যাস্ত হয়ে পড়তো। এখন তেমন একটা দেখা যায় না। সেকালে গাছিরা যখন খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছ তুলতো তখন ছোট সোনা মনিরা গাছির পিছনে ঘুরঘুর ঘুরতো খেজুর গাছের চুমরী খাওয়ার জন্য ও গাছের লাল শরফার জন্য। এই শরফা পুড়িয়ে কচু পাতায় বেধে সন্ধ্যায় বাজি ফুটিয়ে আনন্দ উল্লাস করতো। এখন আর এই উৎসব দেখা যায় না। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে গাছ থেকে গাছি রস নামানো শুরু করে। তখন গ্রামের প্রায় বাড়িতে নতুন ধানের চাউল দিয়ে খেজুরের রসের পায়েশ রান্না দুধ চিতই পিঠা বানানোর ধুম পড়তো।আর গ্রামের মানুষ স্বজনদের নিয়ে অতিআনন্দে পায়েশ ও দুধ চিতই পরিবেশন করতো। তা আজ আর হয় না।
অবৈধ ইটভাটার কারনে এই খেজুর গাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই এই প্রকৃতিক সম্পদ বিলীনের হাতথেকে বাচাতে সরকারের অগ্রনিভুমিকা পালন করতে হবে।
লোহাগড়া এলাকার গাছি জামাল শেখ, ইলিয়াস কাজি, শামছু মোল্যা, আওয়াল মোল্যা সহ ১০/১২ জন গাছির সাথে কথা হলে তারা বলেন আমরা খেজুরের রস ও গুড় তৈরীর কাজ ছেড়ে দেওয়ার পথে। কারণ আগে খেজুরের বাগান ছিল, প্রতি বাগানে ১/২ শত গাছ থাকতো, অতি সহজে গাছ কেটে রস ও গুড় তৈরী করতে সহজ হতো কিন্তু এখন তা হয় না। এক গাছ থেকে আরেক গাছের দুরত্ব প্রায় ৩/৪ শত হাত। তাছাড়া ইট ভাটায় প্রতি বছর লাখ লাখ গাছ কেটে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যার কারণে গাছেরও শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এমন চলতে থাকলে কোন এক সময় খেজুর গাছ বিলীন হয়ে যাবে। সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে খেজুর গাছ আমাদের দেশ থেকে বিলীন হবে না। আমরা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারবো বলে মনে করি।