মহামারী করোনা ভাইরাসের ছোবলে সারা দেশের মত সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছাতেও শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। বই খাতা ছেড়ে অনেকেই নানা পেশায় নিযুক্ত হচ্ছে, বেড়েছে বাল্য বিয়েও। বর্তমান অবস্থায় হতাশ না হয়ে অনলাইন ক্লাসে মনযোগী হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের বই পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকেরা।
এক বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত চৌগাছার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। কিন্ডার গার্ডেন থেকে শুরু করে কলেজ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্ধ। এ সব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এক বছরের বেশি সময় ধরে অলস সময় পার করতে করতে অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছে।
মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশ কিছু শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী তা বুঝে উঠতে পারে না। পরিবারে অলস শুয়ে বসে থাকতে থাকতে অনেকেই যেন বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে বাল্য বিয়ে অন্যদিকে শিশু শ্রমও বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চৌগাছার বিভিন্ন মটরসাইকলে গ্যারেজ, গার্মেন্টস বা শাড়ি কাপড়ের দোকান, মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে শিশুরা মাসিক বা দিন চুক্তিতে কাজ করছেন। শুধু তাই না হাইস্কুল ও কলেজ পড়ুয়া নিন্মবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক ছেলে রাজধানী ঢাকা কিংবা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যাত্রীবাহি বাসের সহকারীর কাজসহ নানা কাজে নিযুক্ত হয়েছে বলে অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, করোনার গেল এক বছরে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিশেষ করে কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে বড় একটি অংশের বিয়ে দিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর সদরের একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, এক বছরে তার কলেজের শুধু ২য় বর্ষের অন্তত ২০ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে তারা পড়ার সাথে থাকতে পারতো। ছেলে মেয়েদের অভিভাবকের বড় একটি অংশ হয় অশিক্ষিত না হয় অসচেতন। যার ফলে ছেলে মেয়ে পিতা মাতাকে যাই বোঝাচ্ছেন অভিভাবক সেই কথায় সাড়া দিচ্ছেন, ফলে বাল্য বিয়ে ও শিশুশ্রম তুলনা মূলক ভাবে বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে চৌগাছা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হতে আমাদের ছেলে মেয়েরা এক বছরের অধিক সময় বঞ্চিত। অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও অনেক ছেলে মেয়ে সেটি ভাল ভাবে বুঝে উঠতে পারছেনা। বর্তমান অবস্থায় ছেলে-মেয়ে কিংবা অভিভাবক কেউ হতাশা না হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি পরিবারের অভিভাবককে এই সময়ে বাচ্চাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচারণ করার পাশাপাশি তারা কোথায় যাচ্ছে কি করছে সেদিকে একটু নজর দিতে হবে।”
খুলনা গেজেট/এমএইচবি