চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী টোল রোড এলাকা থেকে সজীব নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি বলছে, বিয়ে করানোর কথা বলে টোল রোড এলাকায় নিয়ে সজীবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (৩১ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা।
তিনি বলেন, গত ২৭ অক্টোবর পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী টোল রোড থেকে অজ্ঞাত একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তার লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, লাশের পরিচয় শনাক্তের তিন দিনের মাথায় খুনিকে গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতার নুরুল আমিন শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে বিয়ের কথা বলে ডেকে নিয়ে সজীবকে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেছেন নুরুল আমিন। এ কাজে তাকে শাজাহানসহ তিন জন সহযোগিতা করেছেন। পরে আকবর শাহ এলাকা থেকে শাজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে পিবিআই কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী টোল রোডের এলাকায় কৃষি জমিতে স্থানীয় লোকজন একটি অজ্ঞাত মরদেহ দেখতে পেয়ে পাহাড়তলী থানাকে জানায়। পরে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের করে অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে। জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম সজিব। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল এলাকায়। পরে সজিবের স্বজনরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে। এ ঘটনায় ২৮ অক্টোবর সজিবের ভাই মো. ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পাহাড়তলী থানার মামলা করে। এরপর পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের একপর্যায়ে ২৯ অক্টোবর সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ শহরের নাতিরাবাদ এলাকা থেকে এ হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতক মো. নুরুল আমিনকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে আকবর শাহ এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত শাজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পিবিআইয়ের এসআই মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ঘটনার ভিকটিম সজীব পেশায় একজন পিকআপ ভ্যান ড্রাইভার। গ্রেফতার নুরুল আমিন পেশায় একজন টাইলস শ্রমিক এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস একজন গার্মেন্টস কর্মী। স্বামী-স্ত্রী দুজনই চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করত।
করোনার কারণে দ্বিতীয়বার লকডাউনের সময়ে আর্থিক অনটনে পরে স্বামী-স্ত্রী হবিগঞ্জে নিজ গ্রামে ফিরে যান। গ্রামে অবস্থানকালীন সময়ে পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এ নিয়ে নুরুল আমিন তার স্ত্রীকে মারধর করলে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রাগ করে চট্টগ্রামে আসার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, ঘর থেকে বের হয়ে জান্নাতুল ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড এলাকায় এসে একা হয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রামে আসার কোনো উপায় না পেয়ে চট্টগ্রামগামী একটি পিকআপে করে চট্টগ্রাম শহরে আসে। পথিমধ্যে পিকআপ চালক ভিকটিম সজীবের সঙ্গে জান্নাতুল ফেরদৌসের পরিচয় ঘটে। পরিচয়ের ফলে প্রায় সময়েই ভিকটিম সজীব ও জান্নাতুল ফেরদৌস ফোনে কথা বলত। ফোনালাপের বিষয়টি নুরুল আমিন জেনে যায়। যেই কারণে ঘটনার প্রায় এক মাস আগে নুরুল আমিনের সঙ্গে তার স্ত্রী জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের সুযোগে ভিকটিম সজীবের সঙ্গে জান্নাতুল ফেরদৌসের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়।
এরই একপর্যায়ে ঘাতক নুরুল আমিন পুনরায় বিয়ে করার জন্য তালাক দেওয়া স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে চাপ দিতে থাকে। এতে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রাজি হয়নি। অপরদিকে ভিকটিম সজীবও জান্নাতুল ফেরদৌসকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। এরই একপর্যায়ে নুরুল আমিন তালাক দেওয়া সাবেক স্ত্রীকে ফিরে পেতে সজীবকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, সজিবকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে নুরুল আমিন তার আগের পরিচিত আসামি শাজাহানের সঙ্গে আলোচনা করে। এতে আসামি শাজাহান রাজি হয় এবং খুনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। পরিকল্পিতভাবে গত ২৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাজী অফিসে বিয়ে করতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মো. নুরুল আমিন ও শাজাহানহ তিন জন মিলে ভিকটিম সজীবকে উত্তর কাট্টলী টোল রোড এলাকার কৃষি জমিতে নিয়ে যায়। ঘাতকরা সজীবকে খুন করবে বলে আঁচ করতে পেরে সে পালানোর চেষ্টা করে। তখন ঘাতক নুরুল আমিন তাকে জাপটে ধরে এবং অন্যরা মিলে সজিবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।