মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে মুশফিকুর রহিম অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট হওয়ার পর দেশের বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের বিরুদ্ধে স্পট-ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়। ভীষণ স্পর্শকাতর ওই প্রতিবেদনে ‘ভুল তথ্য’ ছিল উল্লেখ করে তা সরিয়ে ফেলার পরদিন আইনি পদক্ষেপ নিলেন মুশফিক। তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান একাত্তর টেলিভিশনের হেড অফ নিউজ, ক্রীড়া সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক সাইফুল রূপককে আইনি নোটিশ পাঠালেন।
শনিবার ব্যারিস্টার শিহাবের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ চলাকালীন গত ০৬.১২.২৩ইং তারিখে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের “আউট অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড”কে কেন্দ্র করে “মিরপুর টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ের গন্ধ! সন্দেহ সিনিয়র ক্রিকেটারের দিকে!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ৭১ টেলিভিশনের নিয়মিত অনুষ্ঠান খেলাযোগের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের আউট নিয়ে মনগড়া, অসত্য, উদ্দেশ্য-প্রণোদিত তথ্য পরিবেশন করে তার দীর্ঘ ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ওপর কালিমা লেপন করা হয়েছে এবং তার সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি এমন সময়ে করা হয়েছে যখন বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট চলমান। উক্ত প্রতিবেদনের কারণে মুশফিকুর রহিম পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে সুনাম ক্ষুণ্ণের শিকার হয়েছেন এবং তিনি এই বিকৃত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদনের কারণে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সময় পার করেছেন।
“Mr. Dependable” খ্যাত মুশফিকুর রহিমের পরিশ্রম ও ঘামে অর্জিত সুনাম এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিবেদনের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনের কারণে তার অপূরণীয় সুনামহানি হওয়ার প্রেক্ষিতে ৭১ টেলিভিশনের হেড অফ নিউজ, ক্রীড়া সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে কিছু বিষয়ের নিষ্পত্তি চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মুশফিকুর রহিমের পক্ষে নোটিশটি আজ ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আইনি নোটিশে চারটি বিষয়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিষ্পত্তি চাওয়া হয়েছে-
১. অতি সত্ত্বর ইউটিউবসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অসত্য ও মনগড়া প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলতে ও সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
২. ভুল ও অসত্য এবং মানহানিকর তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদনের জন্য ৭১ টেলিভিশনকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ তাদের টিভি চ্যানেলে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রচার করতে বলা হয়েছে।
৩. ৭১ টেলিভিশনকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাদের এই মনগড়া, ভুল প্রতিবেদনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।
৪. সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক সাইফুল রূপককে ভবিষ্যতে এমন অসত্য ও মনগড়া প্রতিবেদন না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে মর্মে মুশফিকুর রহিমের নিকট লিখিতভাবে ৭১ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নীতি-আদর্শ মেনে করা হয়নি উল্লেখ করে একাত্তর টিভির মতো সুপরিচিত চ্যানেলে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ অপ্রত্যাশিত বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশে উক্ত প্রতিবেদন দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির অপরাধ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর ২৫(১)(ক), ২৫(২) এবং ২৯ ধারায় সাইবার বুলিং-এর অপরাধ উল্লেখ করে প্রতিকার না পেলে ফৌজদারি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের দেওয়ানী আদালতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
গত বুধবার বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ৪১তম ওভারের চতুর্থ বল পেছনের পায়ে গিয়ে ডিফেন্স করেন মুশফিক। বল পড়ে পেছনের দিকে যাচ্ছিল, তবে ছিল না স্টাম্পের ধারেকাছে। তবুও মুশফিক হাত দিয়ে তা আটকে দেন। স্বাভাবিকভাবেই আবেদন করে নিউজিল্যান্ড। রিপ্লে দেখে মুশফিককে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার। আগে এই ধরনের পরিস্থিতিতে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট দেওয়া হতো। পরে সেটা ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের অধীনে নিয়ে আসে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি।
খুলনা গেজেট/এমএম