খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় উপজেলা কয়রার চাষিদের আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলু। লবণ সহিঞ্চু ও অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় মিষ্টি আলু চাষে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। খুলনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমিতে মিষ্টি আলু আবাদ হয়েছে এ উপজেলায়।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে খুলনা জেলায় মোট ১৫৯ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে। তন্মধ্যে কয়রা উপজেলায় ১৩০ হেক্টর, পাইকগাছা উপজেলায় ৭ হেক্টর, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৭ হেক্টর, ডুমুরিয়া উপজেলায় ৬ হেক্টর, রূপসা উপজেলায় ৫ হেক্টর এবং দৌলতপুর মেট্রো, লবণচোরা মেট্রো, ফুলতলা উপজেলা ও তেরখাদা উপজেলায় এক হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কয়রা উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ গুণ বেশি আবাদ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ বছর জেলায় ৭৩৮ টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের আশা করছে।
কয়রা উপজেলার পাটুলিয়া গ্রামের কৃষক চন্ডিপদ বলেন, গত মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করি। ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রায় দেড় লাখ টাকার আলু বিক্রি করি। আমি এবারও ওই জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করেছি। আশা করি ভালো ফলন পাবো।
একই এলাকার কৃষক কালিপদ বলেন, আমাদের এখানকার জমিতে আগে মাত্র একটি ফসল হত। কয়েক বছর ধরে দুই ফসল পাচ্ছি। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আমাদের এলাকা লবণাক্ত হওয়ায় সব ফসলে ভালো ফলন হয় না। তবে মিষ্টি আলুর ভালো ফলন হচ্ছে। এজন্য মিষ্টি আলু চাষে এ এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ এলাকার পুটিমারা, কুমিরমারা ও তেরআউলিয়া খাল ইজারা নিয়ে লবণ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। যদি লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করে মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে খালসংলগ্ন প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
আরেক চাষি আনন্দ সরকার বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও এলাকার অন্যান্য কৃষকদের ভালো ফলন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে
এবারই প্রথম মিষ্টি আলু চাষ করেছি।
খুলনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে কয়রার আমাদী ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: নাঈমুর রহমান বলেন, মিষ্টি আলুর উৎপাদন খরচ কম ও লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আমরা কৃষকদের মিষ্টি আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়া অন্য ফসলের তুলনায় রোগ ও পোকার আক্রমণ অনেক কম। উপকূলীয় অঞ্চলে এ ফসল অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, গত বছর আমাদী ইউনিয়নে ৯ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ হয়। সন্তোষজনক ফলন ও ভালো দাম পায়। আমরা অন্যান্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে এবার ১১০ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিষ্টি আলু চাষের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। মিষ্টি আলু চাষে তেমন রোগবালাই নেই। এতে লেদা পোকা নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণ হয়, যা থেকে পরিত্রাণের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে আগাছা পরিষ্কার, সুষম সারের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হয়। সাধারণত বেলে-দোঁ-আশ মাটিতে মিষ্টি আলুর চাষ ভালো হয়। বীজ রোপণের ১৫০ থেকে ১৬০ দিন পর মিষ্টি আলুর ফলন ঘরে তোলার উপযোগী হয়। প্রতি শতকে ৬০০ থেকে সাড়ে ছয়শ আলুর কাটিং ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। বেশ কয়েকটি জাতের মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। তবে বেশি চাষ হয়েছে সাফারি, বারি-৮ ও বারি-১২ জাত।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মিষ্টি আলু চাষ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় মিষ্টি আলুর উৎপাদন খরচ কম হয়। বাজারদরও ভালো। এটি লবণ সহিঞ্চু ফসল। ফলে কয়রার কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি অত্যন্ত সম্ভবনাময় ফসল।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মিষ্টি আলুর চাষ বৃদ্ধিতে আমাদের মাঠ কর্মীরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। এটি একটি পুষ্টিকর ফসল। চলতি মৌসুমে জেলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় তিনগুণ আবাদ হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম