ক্রিকেট কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজারা। একের পর এক দুর্দান্ত জয় দিয়ে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব শেষের আগমুহূর্তে তারা দারুণ হোঁচট খেয়েছে। ছিটকে গেছে ভারতের মাটিতে হতে যাওয়া আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে।
সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগের ম্যাচে বিশ্বকাপের পথ থেকে বিচ্যুত করেছিল স্কটল্যান্ড। তার ঠিক পরের ম্যাচে স্কটিশদের নিশানায় জিম্বাবুয়ে। বলতে গেলে জিম্বাবুয়ের হৃদয় ভেঙে ভারত বিশ্বকাপের দৌড়ে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে স্কটল্যান্ড। ক্যারিবীয়ানদের পর আইসিসির আরও একটি পূর্ণ সদস্য দেশ আসন্ন বিশ্বকাপের আগে বিদায় নিয়েছে।
বাছাইপর্বে ১০ দলের দুই গ্রুপ থেকে শীর্ষে থেকে গ্রুপপর্ব পার হয়েছিল জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কা। ফলে গত ম্যাচের সমীকরণ ছিল এমন দেশ দুটির মুখোমুখি দেখায় যারা জিতবে, তারাই ওঠে যাবে বিশ্বকাপে। সেই যাত্রার শুরুতেই উতরে যায় লঙ্কানরা। ফলে জিম্বাবুয়ের জন্য এটি ছিল দ্বিতীয় ও শেষ সুযোগ। কিন্তু গ্রুপপর্বে টানা জিতে আসা দলটির দ্বিতীয় সুযোগটিও দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। যা দারুণ ফর্মে থাকা উইলিয়ামস, রাজা ও রায়ান বার্লের সম্ভাবনার তরী থামিয়ে দিয়েছে তীরে এনে।
আজ (৪ জুলাই) বুলাওয়েতে নিজেদের শেষ সুযোগ কাজে লাগানোর মিশনে নেমেছিল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। অন্যদিকে, এই ম্যাচের পর আরেকটি সুযোগ রয়েছে স্কটিশদের সামনে। এখনও বিশ্বকাপের দৌড়ে টিকে থাকা নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তারা চূড়ান্ত ম্যাচে মুখোমুখি হবে। যেখানে জিতলেই ভারতের টিকিট পেয়ে যাবে স্কটল্যান্ড। তবে নেদারল্যান্ড জিতলে মেলাতে হবে রানরেটের সমীকরণ। বর্তমানে জিম্বাবুয়ে ও স্কটিশদের পয়েন্ট সমান ৬ করে। তাদের চেয়ে দুই পয়েন্ট কম ডাচদের।
এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভার শেষে স্কটল্যান্ড ৮ উইকেটে ২৩৯ রানের মাঝারি লক্ষ্য ছুড়ে দেয়। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ রান (৩৪ বল) করে মাইকেল লিস্ক। মূলত তার ঝড়ো ব্যাটিংয়েই স্কটল্যান্ডের পুঁজিটা চ্যালেঞ্জিং হয়েছে। তার আগে থিতু হয়েও নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি টপ অর্ডার ব্যাটাররা।
শুরু থেকে উইকেট না পড়লেও স্কটল্যান্ডের রানের গতি ছিল ধীরস্থির। জিম্বাবুইয়ান বোলারদের তোপে ১৭তম ওভারে ৫৬ রানেই তারা প্রথম উইকেট হারায়। পেসার চাতারার বলে ২৮ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন স্কটিশ ওপেনার ক্রিস্টোফার ম্যাকব্রাইড। এরপর ২৬ ওভারে একশ পেরোলেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় দলটি। টপ-অর্ডারদের মধ্যে ম্যাথু ক্রস ৩৮, ব্রেন্ডন ম্যাকমুলেন ৩৪ এবং জর্জ মুনসি ৩১ রান করে আউট হয়ে যান। এরপর দুইশ পেরোতে পারা নিয়ে শঙ্কায় থাকা স্কটিশদের হাল ধরেন লিস্ক। ৩টি চার এবং ২টি ছয়ের মারে দলও পেয়ে যায় ২৩৮ রানের লড়াকু সংগ্রহ। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন উইলিয়ামস।
রানতাড়ায় স্বাগতিকদের শুরুটাই ছিল বাজে। দলীয় রানের খাতা খোলার আগেই ক্রিস সোলের প্রথম বলে আউট হয়ে যান ওপেনার জয়লর্ড গাম্বি। এরপর প্রায় প্রতি ১০ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন ক্রেইগ আরবাইন, ইনোসেন্ট কাইয়া এবং শন উইলিয়ামস। ফলে ৩৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে রীতিমতো ধুঁকছিল। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্ল। রাজা ৩৪ রানে ফিরলেও আরেক প্রান্ত আগলে রাখেন বার্ল। ওয়েসলি মাধভেয়ারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়েন ৭৩ রানের জুটি।
এরপর ৪০ রানে ফেরেন মাধভেয়ারও। ফলে জিম্বাবুয়ের হয়ে একমাত্র আশার প্রদীপ হয়ে থাকেন বার্ল। শেষ উইকেট পর্যন্ত টিকে থাকলেও, অন্যপ্রান্তে তিনি সতীর্থদের যাওয়া-আসা দেখেছেন। ফলে তার ৮৩ রানের অনবদ্য ইনিসও আলোর মুখ দেখেনি। থুবড়ে পড়েছে গভীর হতাশায়। মাত্র ৪১.১ ওভারেই থেমে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
স্কটল্যান্ডের হয়ে ক্রিস সোল সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া দুইটি করে শিকার করেছেন লিস্ক ও ম্যাকমুলেন।