দীর্ঘ নয় মাস পর সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়ার মূল ভাঙ্গনে ক্লোজারের চাপানের কাজ শেষ হয়েছে। শনিবার দিনভর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের প্রচেষ্টায় ভাঙ্গন পয়েন্টে বালুর টিউব চাপান দিয়ে লোকালয়ে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢোকা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে দীর্ঘ নয় মাস পানিবন্দী রয়েছে প্রতাপনগর মানুষ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পানের আঘাতে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে কমপক্ষে ৮টি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় প্রতাপনগর ইউনিয়নের পুরো এলাকা। গাছপালা, ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে ও দুমড়ে মুচড়ে পড়ে। ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ভেসে যায়। ডুবে যায় ইটভাটা। বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয় আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্রায় ২২টি গ্রাম। বন্যায় গৃহহারা হয়ে অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নেয় সাইক্লোন শেল্টার, উচু স্থান ও বেড়িবাঁধের উপর টোং ঘরে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ না হওয়ায় প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্লাবিত এলাকায় নিয়মিত চলতে থাকে জোয়ার ভাটা।
প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া এলাকার ভেঙ্গে যাওয়া এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয় গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরে আসে বানভাসি মানুষের মাঝে। আম্পানের আঘাতে যারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন তারাও নিজ ভিটায় ফিরতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু পাউবো এবং নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ভাঙ্গন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ কাজ চলে অত্যন্ত ধীর গতিতে। নির্মাণ কাজে অদূরদর্শিতার কারণে ভাঙ্গন পয়েন্টে ক্লোজার দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আরো দীর্ঘ হচ্ছিল বানভাসি মানুষের ঘরে ফেরার আশা।
অবশেষে ২০ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দিনভর কাজ করে কুড়িকাহুনিয়ার ভাঙ্গন পয়েন্টে ক্লোজারে চাপানের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা। চাপানের পর ক্লোজার নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকরা শনিবার সারা রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত ক্লোজারের চাপান ঠিকঠাক মত ছিল বলে জানিয়েছেন কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। কুড়িকাহুনিয়ায় বাঁধের চাপান কাজ পরিদর্শন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার শনিবার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ জাকির হোসেন বলেন, কুড়িকাহুনিয়া ভাঙ্গন পয়েন্টের ক্লোজারে চাপান কাজ সম্পন্ন করতে তার নেতৃত্বে ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা করেছেন। খেয়ে না খয়ে দিনরাত তারা পরিশ্রম করেছেন। দীর্ঘ নয়টি মাস পরে কুড়িকাহুনিয়া মূল ভাঙ্গনটিতে চাপান দিতে পেরেছি। যদি এই বাঁধটি টিকে যায় তাহলে কপোতাক্ষ নদের পানি আমার ইউনিয়নের মানুষকে ভাসাতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, আম্ফানের আঘাতে গৃহহীন হয়ে পড়ে খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদ পরিবেষ্টিত সাতক্ষীরার প্রতাপনগরের হাজারো পরিবার। এখানকার গৃহহীনদের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষ পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে আশ্রয় নেয় অন্যত্রে। এদের একটি বড় অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছে। দীর্ঘ নয়টি মাস ধরে আমার প্রতাপনগরবাসী দুর্বিসহ জীবন যাপন করেছে। আশা করছি হরিষখালীর একটি পয়েন্টের ক্লোজার নির্মাণ কাজ শেষ হলে যতদ্রুত সম্ভব সরকারের সহযোগিতায় আমরা প্রতাপনগর ইউনিয়নে আবার আগের চিত্র ফিরিয়ে আনতে পারবো।
খুলনা গেজেট/এনএম