খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ২৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১১২৯
  সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিন্ধান্ত
  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তিন রিভিউ আবেদনের শুনানি ১৭ নভেম্বর

আঘাতের পর নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় রূপসার মরিয়মকে, রায় রবিবার

সাগর জাহিদুল

ঘটনাটি ২০২০ সালের আগস্টের। হালিমা বেগম হন্যে হয়ে খুঁজছেন তার নাড়ি ছেড়া ধন ছোট মেয়েকে। কয়েকদিন ধরে তার মেয়ে মরিয়ম ওরফে ছোটকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাকে পেতে। অবশেষে তাকে পাওয়া যায়, তবে জীবিত নয়। অর্ধগলিত ও পোড়া অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল মেয়েটিকে। রূপসা উপজেলার আলোচিত হত্যাকান্ড এটি। আর এ হত্যার অভিযোগে স্বামী রফিক শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আগামীকাল রবিবার ৩১ অক্টোবর এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ফকিরহাট উপজেলার হালিমা বেগমের কন্যা মরিয়মের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রূপসা উপজেলার নেহালপুর গ্রামের মৃত আবেদ শেখের পুত্র রফিক শেখের। এর আগে রফিকের একটি সন্তানসহ স্ত্রী ছিল। তার আচারণের কারণে সে স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। রফিক কবুতর পালন ও মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবন যাপন করত। ফকিরহাটে কবুতর কিনতে গিয়ে মরিয়ম ওরফে ছোট’র সাথে পরিচয় হয় রফিক শেখের। এরপর মোবাইলে যোগাযোগ তারপর প্রেম ও বিয়ে হয় তাদের।

প্রথমে তাদের দম্পত্য জীবন সুখের ছিল। এর মধ্যে রফিকের মনে সন্দেহের দানা বাঁধে। রূপসার নেহালপুর গ্রাম থেকে বাড়ি পরিবর্তন করে ফকিরহাট উপজেলার বড় খাজুরা গ্রামের মোঃ রকি খানের ভাড়া বাড়িতে চলে যায় তারা। সেখানেও অমানুষিক নির্যাতন করা হয় তাকে ।

২০২০ সালের ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় মায়ের সাথে ভালমন্দ কথা হয়। রাত ১টার দিকে মরিয়মের স্বামী, হালিমা বেগমের প্রতিবেশী রঞ্জন বৈরাগীকে ফোন করে জানান, মরিয়মকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় হালিমা বেগম ছটফট করতে থাকে মেয়ের খবর নেওয়ার জন্য। পরের দিন নিকট আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি খোঁজ নিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ওই বছরের একই মাসের ১৫ তারিখ দুপুর ১২ টার দিকে রূপসা থানা পুলিশ দেবীপুর গ্রামের দিপক দাসের পানের বরজের পূর্ব পাশ থেকে অজ্ঞাতনামা এক মহিলার অর্ধগলিত ও আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ সংবাদ জানতে পেরে হালিমা রূপসা থানায় যোগাযোগ করে হাসপাতালে গিয়ে মেয়েকে সনাক্ত করেন। রফিক শেখের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি। রফিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো: শাহাবুদ্দিন গাজী তাকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

যেভাবে হত্যা করা হয় মরিয়মকে

তদন্ত রিপোর্টে প্রকাশ, ২০২০ সালের ১২ আগস্ট দুপুরে মোটরসাইকেল চালিয়ে এসে মরিয়মকে বাড়ি পায়নি রফিক। জিজ্ঞাসা করা হলে তার উত্তর দিতে পারেনি ভিকটিম। আগে থেকে পরকিয়ার সন্দেহে মরিয়মকে সন্দেহ করত। হত্যার পরিকল্পনা আসে রফিকের মাথায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমের স্বামী ঘটনার দিন সকালে দেবীপুর এসে দিপকের পানের বরজের মধ্যে পেট্রোল ও বস্তায় করে কয়েকটি ইট রেখে যায়। রাতে বেড়ানোর কথা বলে রূপসা ব্রীজ ও কুদির বটতলায় আসে। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক ওই পানের বরজের কাছে এসে রফিক ভিকটিমের সাথে ছলনার আশ্রয় নিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগে ইট দিয়ে মরিয়মের মাথায় আঘাত করতে থাকে। আঘাতে মাটিতে পড়ে যায় সে। পরে বস্তায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আসামি। যা ১৬৪ ধারায় আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জাবনবন্দিতে জানায় সে। তিন দিন পর পুলিশ ওই স্থান থেকে ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!