স্বামীর হার্টের সমস্যা এবং জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় বেকারত্বতার কারণে নিজে ফেরি করে সংসারের হাল ধরেন তসলিমা বেগম মুসলিমা (৪১)। তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করা হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। সেই প্রতিবেদনের সূত্রধরে মুসলিমাকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি দোকান করার জন্য ৩০ হাজার টাকা দেন। সাইকেলে ফেরি করার মালামাল, নিজের ও ধার-দেনা করা কিছু টাকা এবং ওই ব্যক্তির সহায়তা দেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে খালিশপু হাউজিং বাজারে দোকান শুরু করেন মুসলিমা।
দোকানে বেচাকেনাও শুরু করেছিল। মোটামুটি ভালোই চলছিল। এরমধ্যেই মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাড়ায় তার ১০ বছর বয়সী মেঝ মেয়ে তানজিলা রহমান নওরিনের অসুস্থতা। প্রথমে শিশুটিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে রাজধানীর পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংগ্রামী তসলিমা বেগম মুসলিমা বলেন, একে স্বামীর হার্টের সমস্যা। এরমধ্যে নওরিনের অসুস্থতায় আমি চরম দুর্ভোগে রয়েছি। তিন মেয়ের মধ্যে নওরিন মেঝ। আমার দোকানে কাজে সহযোগিতা করেছে সে। খুবই চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে আমার অসুস্থ হয়ে নিস্চুপ প্রায়। কয়েকদিন আগে নওরিনের চোখ-মুখ হলুদ হয়ে যায়। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও পেটে ব্যাথা শুরু হয়। কিছু খেতে পারছিল না। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করি। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেয়ের লিভার সিরোসিস এবং বি ভাইরাস ধরা পড়ে। শারিরীক অবস্থা খারাপ হলে চিকিৎসকরা ঢাকা পিজি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
তিনি বলেন, টাকার অভাবে ঢাকা যেতে পারছিলাম না। পরে স্থানীয় এক দোকান মালিকের কাছ থেকে ধার করে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকা পিজি হাসপাতালে আসি ১৬ ফেব্রুয়ারি। বর্তমানে পিজি হাসপাতালের ৫ম তলায় শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে নওরিন। আমি, আমার স্বামী ও বড় মেয়ে সাথে রয়েছে। ছোট মেয়েটাকে খুলনায় আত্বীয়র কাছে রেখে এসেছি।
মুসলিমা বলেন, এমন বিপদ যেন আল্লাহ কাউকে না দেয়। কয়েকমাস আগে ছোট ভাই মারা গেছে। তার কিছুদিন পর আমার মাও মারা গেছেন। এখন মেঝ মেয়েটার অবস্থা ভালো না। পেটের যন্ত্রণায় কান্না-কাটি করছে। বলছে আম্মু মনে হয় আমি আর বাঁচবো না। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। অনেক ওষুধপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। এখানে আমার সহায়তা করার মত কেউ নেই। খুলনায় আত্বীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে সহযোগিতার কথা বলেছি। তারা যতটুকু করছে, তা দিয়ে এই কয়দিন চলছি। অনেক টাকা দেনা হয়ে গেছি। যদি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি বা সংগঠন অথবা সরকারি সহযোগিতা পেতাম তাহলে মেয়েটার চিকিৎসার খরচ মেটানো সম্ভব হতো। সহযোগিতার পাশাপাশি মেয়ের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন মুসলিমা।
মুসলিমার স্বামী ওবায়দুর রহমান বলেন, অসুস্থ হলেও পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে ইজিবাইক চালিয়ে রোজগার করছিলাম। কয়েকদিন ধরে মেয়ের অসুস্থতার কারণে তার পাশে আমাদের সার্বক্ষণিক থাকতে হচ্ছে। এ জন্য এখন আয়ের উৎসও বন্ধ রয়েছে। ফলে ধারদেনা করে চিকিৎসার খরচ চালাতে হচ্ছে। তিনি মেয়ের জন্য সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই