ব্যবসা বাণিজ্য মন্দার পাশাপাশি এলসি জটিলতার কারণে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে আড়াই‘শ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব ঘাটতি পড়েছে এই বন্দরে। যা গত ৬ মাসের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫০ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকে এলসি জটিলতার কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ববোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জুলাই-জানুয়ারী পর্যন্ত ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৩১ কোটি ১ লাখ টাকা। এরমধ্যে জুলাই মাসে ৬৬ কোটি ১৫ লাখ, আগষ্টে ৮৪ কোটি ৪১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ, অক্টবরে ১০০ কোটি ৮৮ লাখ, নভেম্বরে ৯৮ কোটি ৫৬ লাখ এবং জানুয়ারীতে ৮৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। কিন্তু ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গত ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে জুলাই মাসে ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ, আগষ্টে ৫৫ কোটি ২ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৫৪ কোটি ৬০ লাখ, অক্টবরে ৪০ কোটি ৯৫ লাখ, নভেম্বরে ৪২ কোটি ৮ লাখ এবং জানুয়ারীতে ৩৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ঘাটতি।
সুত্রটি আরও জানায়, গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে এ বন্দরে রাজস্ব আদায় হয় ৩৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সে হিসাবেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহারকারী সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়শনের সভাপতি কাজী দিলওয়ার নওশাদ রাজু জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে ভোমরা বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে কার্যক্রম কমতে থাকে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা ধারণ ছিল করোনা সংকট কেটে গেলে হয়তো আমদানি-রপ্তানি ভালো যাবে। কিন্ত দেখা যাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নতুন করে একের পর এক সংকট তৈরী হচ্ছে। সর্বশেষ ব্যাংকে এলসি সংকট প্রকট হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা চাহিদা মত এলসি খুলতে না পারায় বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্য খুবই মন্দা যাচ্ছে। যে কারণে এই বন্দরে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি ক্রমশঃ ভারি হচ্ছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টম ডেপুটি সহকারী কমিশনার নেয়ামুল হাসান জানান, বন্দরে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো না যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে ঠিকমত এলসি খুলতে না পারায় তারা চাহিদা মত পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারছেনা। আর ব্যবসায়ীরা যদি পণ্য আমদানি-রপ্তানি ঠিকমত না করতে পারে সংগত কারণেই রাজস্ব ঘাটতি পড়বে। তার পর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যাতে লক্ষ্য অর্জিত হয়।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ভোমরা স্থলবন্দরের জন্য চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ১ হাজার ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭১ কোটি ৯১ টাকা বেশি। তবে গত অর্থবছরে সংশোধিত আকারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
খুলনা গেজেট/এসজেড