করোনার দু:সময়ে উপজেলার খেটে খাওয়া ঋণ গ্রহীতারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এরই মধ্যে এনজিওকর্মীরা চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায় করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। দেশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালে ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ থাকলেও তা মানছেন না অভয়নগরের বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কর্মীরা। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ঋণ গ্রহীতারা। ঋণের টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, অভয়নগর উপজেলার পৌর সভাসহ আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ছোটখাটো বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান। এ ছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে কৃষক, শ্রমিক, দিন মজুর, চা দোকানি, মুদির দোকানদার, কাচাঁবাজার ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার, ভ্যান, মোটরভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনে চালিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করে এ ঋণের কিস্তি দেন।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ঋণ গ্রহীতা হাজেরা বেগম, হোসনেয়ারা বেগম, রোমানা বেগম, বিউটি বেগম, লাইলি বেগম সহ একাধিক ভুক্তভোগী ঋণ গ্রহীতারা বলেন, ‘আমরা বেসরকারি আশা, ব্র্যাক, বন্ধু কল্যান ফাউন্ডেশন, টিএমএসএস, ব্যুরো বাংলাদেশ, গ্রামীন ব্যাংক, জাগরণী চক্র, উদ্দীপন, বিভাসহ অন্যান্য এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা ও ছোটখাটো গাড়ি কিনে তা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহসহ ঋণের কিস্তি দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে লকডাউনে ব্যবসা বানিজ্য প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। লকডাউনে কয়েক সপ্তাহ বাড়ি বসে আছি, কোনো আয়-রোজগার নেই। ধারদেনা করে সংসার চলছে, কিস্তি কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না। লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
অভয়নগরে করোনায় আক্রান্ত ২শ’ ৪৬ জন পৌর এলাকায় ১শ’ ৫৮ ও ইউনিয়নে ৮৮ জন বেড়ে দাড়িয়েছে। এ উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে মহামারী করোনা ভাইরাস। আর এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি চলচ্ছে কঠোর বিধি নিষেধ । এমন অবস্থায় সীমান্ত এলাকা হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ন যশোর আঞ্চলিক ভিত্তিতে কঠোর বিধি নিষেধ ঘোষনা করে জেলা প্রশাসন। আবার ও বাড়ানো হয়েছে বিধি নিষেধ সময়সীমা।
দীর্ঘদিন চলমান লকডাউনের কারণে উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ কর্মহারা হয়ে বর্তমানে অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা বাণিজ্য ও দৈনন্দিন আয় রোজগার। এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার পরিজনদের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিন্ম আয়ের মানুষেরা। এই অবস্থার মধ্যেও তারা এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। উপজেলাতে ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত বেসরকারী এনজিও গুলোর মধ্যে আশা, ব্র্যাক, বন্ধু কল্যান ফাউন্ডেশন, টিএমএসএস, ব্যুরো বাংলাদেশ, গ্রামীন ব্যাংক, জাগরনী চক্র, উদ্দীপন, বিভাসহ অন্যান্য এনজিও বর্তমানে সর্বোচ্চ মাত্রায় ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়মিত কিস্তি আদায় করছে।
এনজিওর ফিল্ড অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, চাকরি বাচানোর শর্তে আমাদের কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য যেতে হচ্ছে। ৪নং, ৫নং, ৬ নং ওয়ার্ডে অনেক বেশি কঠোর বিধি নিষেধ থাকায় বিকাশের মাধ্যমে চাপ দিয়ে কিস্তির টাকা আদায় করা হচ্ছে।
ব্যুরো বাংলাদেশ এনজিওর মহাকাল শাখার কর্মকর্তার মহিদুল বলেন, যারা সেচ্ছায় কিস্তির টাকা পরিশোধ করছে। তাদের টাকা নিচ্ছি। কারোর পরে কোন প্রকার চাপ দেওয়া হচ্ছে না।
উদ্দীপন এর অভয়নগর শাখার ম্যানেজার সরদার আব্দুর ছামাদ জানান, কোন প্রকার কিস্তি আদায়ের চাপ নেই। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ খোলা রয়েছে সেবা প্রদানের জন্য।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের হাতে কোন নির্দেশনা আসেনি । অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব। তাছাড়াও যশোর মাইক্রো ক্রেডিট অধিদপ্তর এই বিষয়টি দেখবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ আমিনুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে নিদের্শনা আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই