অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী এসটি স্কুল এন্ড কলেজে নির্মানাধীন আশ্রায়ণ (সাইক্লোন সেন্টার) কেন্দ্রে কাজে ব্যবহৃত লোহার রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, পাথরের খোয়া, স্যানিটেশন পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল চুরির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার ১নং সুন্দলী ইউনিয়নে সুন্দলী এসটি স্কুল এন্ড কলেজের নৈশ প্রহরী গোপাল মল্লিক চুরির করেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। অভিযুক্ত গোপাল মল্লিক সুন্দলী গ্রামের বারিন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে।
অভিযোগ তুলে ধরে গ্রামবাসী বলেন, তার বিরুদ্ধে লোহার রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, পাথরের খোয়া, স্যানিটেশন পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল চুরি করার ঘটনা এর আগেও রয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে রবিবার সকালে সাইক্লোন সেন্টার নির্মানের কাজ বন্ধ করে দেয়।
ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী গোপালের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করে বলেন, কয়েকদিন আগে রাতের বেলায় গোপালের নির্দেশে বিভুতি বিশ্বাস ও গণেশ মল্লিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১বান্ডেল লোহার রড বাজারে নিয়ে বিক্রি করে।
প্রতিষ্ঠানের নবনির্বাচিত গভর্নিং বডির সদস্য সুজন মল্লিক, সুন্দলী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য প্রকাশ বিশ্বাস, একই গ্রামের প্রনব বিশ্বাস, সুশেন বিশ্বাস, বিজয় মল্লিক, দিলীপ বিশ্বাস (জলদ্বীপ), ঘের ব্যবসায়ী সাধন বিশ্বাস, রাজমিস্ত্রি শ্যামল বিশ্বাস, শিব বিশ্বাসসহ গ্রামবাসী একই অভিযোগ তুলে বিচারের দাবি করেন।
নবনির্বাচিত গভর্নিং বডির সদস্য সনৎ মল্লিক বলেন, ‘গ্রামের অধিকংশ লোক বলছে তুই কতটাকা ভাগা পাইছিস। যে এই ঘটনায় কিছু না বলে চুপ করে আছিস, বাধ্য হয়ে আমি প্রতিষ্ঠানে এসে অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলেছি।’
নির্মানাধীন সাইক্লোন সেন্টারের কাজ তদারকি ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমি গোপালের বাড়িতে খোজ করে কাটা রড, স্যানিটেশন পাই, সিমেন্ট বস্তাসহ অনেক মালামাল পাই। এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও অধ্যক্ষ মো: আব্দুল লতিফকে তখনি অবগত করেছি।
ভ্যানচালক আশুতোষ হালদার জানায়, আনুমানিক গত ২১/২২ মার্চ রাতে গোপাল মল্লিক সুন্দলী বাজারের অমর বিশ্বাসের দোকানে ওয়ারিং পাইপ ও অ্যালবোসহ কিছু মালামাল পৌছে দেয়ার জন্য আমার কাছে ভ্যানের জন্য আসে।
বিষয়টি সম্পর্কে দোকানদার অমর বিশ্বাস জানায়, তিনি দোকানে ছিলেন না। কিন্তু মালামাল তার দোকানে পাঠানো হয়েছিলো।
লোহার রড বহনকারী সুন্দলী এসটি স্কুল এন্ড কলেজের নির্মানাধীন ভবন কাজের রাজমিস্ত্রির জোগালে বিভুতি বিশ্বাস ও গণেশ মল্লিক বলেন, গোপালের নির্দেশে রাতে ১বান্ডিল লোহার রড মাপার জন্য আমরা কাজের সাইট থেকে বাজারে নিয়ে আসার পথে কলেজ গেটে (প্রকাশ বিশ্বাসের ঘেরে কাছে) এসে ভারের জন্য বইতে না পেরে ফেলে দিই, পরে সেগুলো কি হয়েছে আমরা জানিনা।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত গোপাল মল্লিক বলেন, ঐদিন রাতের বেলায় আমি বিভুতি ও গণেশকে এক বান্ডিল লোহার রড দিয়ে সেগুলো মাপার জন্য দিয়ে পাঠাচ্ছিলাম। লোহার রড নিয়ে যাওয়ার সময় প্রনব বিশ্বাস দেখে নেয় এবং রাত্রিবেলা হওয়ায় সকলে সন্দেহ করতে পারে ভেবে আমি সেগুলো কলেজে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বলি। রডের ওজন বেশি থাকায় তারা রডগুলো সেখানে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে সেগুলো আমি ফিরিয়ে আনি।
সুন্দলী এসটি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: আব্দুল লতিফ বলেন, চুরির বিষয়টি আমি শুনেছি। প্রতিষ্ঠানের কমিটির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করেছি। আগামী সপ্তাহে আমরা বসে অভিযুক্ত গোপালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে গোপাল মল্লিক আমার প্রতিষ্ঠানের নৈশ প্রহরি হয়ে একই প্রতিষ্ঠানে নির্মানাধীন সাইক্লোন সেন্টার কেন্দ্রের কাজের মালামাল পাহারাদারের কাজ করে সেই বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না।
সুন্দলী এসটি স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, অনেকদিন যাবৎ গোপাল মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি শুনেছি। মালামালসহ অনেকবার গ্রামবাসীর কাছে ধরাও পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের নৈশ্য প্রহরী (নাইট গার্ড) হিসেবে এই চুরির ঘটনার সাথে যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দলী এসটি স্কুল এন্ড কলেজে একটি চুরি ঘটনা মৌখিক শুনেছি। এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই