যশোরের অভয়নগর উপজেলার সবজির স্বর্গরাজ্য খ্যাত ভৈরব উত্তর জনপদের শশা চাষীরা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিঃশেষ হতে বসেছে। পাইকার ও ফঁড়িয়ারা এ অঞ্চলে এমন ফাঁদ পেতেছে যা কাবলিওয়ালাদেরও যেন হার মানায়। জোঁকের মত কৃষকের উপর জেকে বসেছে তারা। ফলে একজন কৃষক সারা বছর রক্তপানি করে ফসল ফলালেও নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করা ফসলের দামের সিংহ ভাগ গিলে ফেলছে পাইকার ও ফঁড়িয়ারা।
বর্তমানে রমজান মাসে সারাদেশের ন্যায় অভয়নগরেও বেড়েছে শশার কদর। আর উপজেলায় শশার সর্ববৃহৎ পাইকারী হাট রাঙ্গারহাটে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে শতশত মন শশা। যেখানে স্থানীয় ফঁড়িয়ারা কৃষকের নিকট হতে প্রতি মন (৪২ কেজি) শশা ক্রয় করছে ৭শ থেকে ৮শ’ টাকায়। আর পাইকারী বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা এ শশা কিনছেন প্রতি মন (৪০ কেজি) ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকায়। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি মন (৪০ কেজি) শশার দাম ২৫শ’ টাকা থেকে ২৭শ’ টাকা পর্যন্ত। ফলে কেজি প্রতি একজন কৃষক শশার দাম পাচ্ছেন ১৬ থেকে ২০ টাকা। বাজারে খুচরা বিক্রেতার নিকট থেকে প্রতিকেজি শশা কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে প্রতি কেজি শশায় ফঁড়িয়া ও পাইকার হজম করছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
সরেজমিনে, অভয়নগর উপজেলার শশার সর্ববৃহৎ পাইকারী বাজার রাঙ্গারহাট ও নওয়াপাড়া বাজারে খোঁজ নিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। রাঙ্গারহাট বাজারে যেয়ে দেখা যায়, শতশত কৃষক তাদের উৎপাদিত শশা এ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। আর তাদের কাছ থেকে মন প্রতি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় কিনে নিচ্ছেন স্থানীয় কতিপয় ফঁড়িয়া।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এক সময় এ বাজারে যশোর, খুলনাসহ দুর দুরান্ত থেকে পাইকাররা সরাসরি এসে কৃষকদের নিকট হতে পণ্য কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত কয়েক বছর স্থানীয় ফঁড়িয়াদের কাছেই তাদের পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। অজ্ঞাতকারণে এ বাজারে গত ৩/৪ বছর যাবৎ পাইকাররা আসা বন্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থায় পড়তে হয়েছে তাদের।
যদিও স্থানীয় ফঁড়িয়া ও বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি বাজারে যাতায়াতের রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় পাইকাররা এ বাজারে আসতে চাননা। তবে কৃষকদের মাঝে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তাদের প্রশ্ন- রাস্তার কারণে পাইকাররা না এলে ফঁড়িয়ারা কিভাবে একই রাস্তায় এ পণ্য যশোর-খুলনাসহ দূর দুরান্তের পাইকারদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন?
এ ব্যাপারে উপজেলার পুড়াখালী গ্রামের শশা চাষী সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, হাসানুর রহমান, বাবুল মোড়ল, মোশাররফ হোসেন, মামুনসহ রাঙ্গারহাটে শশা বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, নিজেদের প্রতিদিনের ৮/১০ ঘন্টা শ্রম বাদে বিঘা প্রতি শশা চাষে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে সঠিক দাম না পাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে বলে সংশয় রয়েছে।
দিঘিরপাড় গ্রামের কৃষক ইখতিয়ার সরদার, আবুল হাসান, ইয়াসিন আলী, আজিবর মোল্যা, জাকির হোসেন বলেন, খুচরা বাজারে এক কেজি শশা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। অথচ আমরা এত কষ্ট করে শশা উৎপাদন করে কেজিতে পাচ্ছি মাত্র ১৬ থেকে ২০ টাকা। অথচ এক বিঘা জমিতে নিজেদের শ্রম বাদেও খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিভাবে এ খরচ উঠবে এমন প্রশ্ন তাদের।
এদিকে স্থানীয় ফড়িয়ারা হঠাৎ করে লস হচ্ছে বলে মন প্রতি দাম আরও কমিয়ে দেয়ার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চাঁপাতলা গ্রামের কওছার আলী রাঙ্গারহাট শাশা বাজারের বড় পাইকারী ক্রেতা। তিনি বলেন, গত তিন দিন যাবৎ খুলনা, বরিশাল, শরিয়াতপুর ও মাদারিপুর বাজারে পাইকারী দরে শশা বিক্রি করে মন প্রতি ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা লস হয়েছে। এ কারণে কৃষকদের কাছ থেকে আরও কম দামে শশা না কিনতে পারলে ব্যবসা টিকবেনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তার সমস্যার কারণে সরাসরি পাইকারী ব্যবসায়ীরা এ বাজারে আসেনা। আমরাই এ বাজারের প্রধান ক্রেতা।
এ ব্যাপারে রাঙ্গারহাট বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ সেকেন্দার আলী বলেন, এ বাজারে দুর দুরান্ত হতে এক সময় অনেক পাইকাররা সরাসরি এসে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যেত। তখন কৃষকও মোটামুটি ভালো দাম পেতো। কিন্তু বাজারে বাইরের পাইকাররা প্রবেশ না করায় স্থানীয় মধ্যসত্ত্বভোগীদের দ্বারস্ত হতে হচ্ছে কৃষকদের।
খুলনা গেজেট/ এস আই