খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৩ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১৫
  ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে বাবা-মেয়ের মৃত্যু
  এমন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  আজ মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা-বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

অধ্যক্ষ পেটানো চেয়ারম্যানের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, বিব্রত আ’লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার কয়রায় মাদরাসা অধ্যক্ষকে মারধর করার ঘটনায় গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুলের মুক্তির দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে মানববন্ধন ও মিছিল করা নিয়ে খোদ সভাপতি-সম্পাদকসহ দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র তেমন কোন নেতাকে দেখা যায়নি। তারা এ ঘটনায় বিবৃত বলে জানিয়েছেন।

মানববন্ধনের ব্যানারে আয়োজনে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নাম থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হারুণ আর রশিদ বলেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, মানববন্ধনটি ইউনিয়নবাসির উদ্যোগে করা হয়েছে। অপরদিকে, মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক মো. এমদাদুল হক টিটু জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধনটি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হারুনর রশিদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ফজর আলী উপস্থিত ছিলেন।

কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, অধ্যক্ষকে মারপিটের যে ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বাহারুলের পক্ষে মানববন্ধন ও মিছিলের বিষয়ে অবগত নন। এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার পাড় বলেন, মানববন্ধন ও মিছিলে তিনি ছিলেন না। তবে মিছিলের পরে খবরটি শুনেছেন। বাহারুল যে ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটি অমানবিক। সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকমান্ড জানেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, প্রথমে মাদরাসা থেকে বাহারুলের নাম প্রস্তাব করলেও ঢাকার ইসলামিক অ্যারাবিক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেননি। পরে আমাকেসহ তিনজনের নামের প্রস্তাবনা পাঠানো হলে কর্তৃপক্ষ আমাকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেন। মাদরাসার সভাপতি হওয়াকে কেন্দ্র করে বাহারুল বেপরোয়া। অধ্যক্ষ মাসুদকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে ও চাঁদা চেয়েছে।

তবে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বাহারুলের মুক্তির দাবিতে দলীয় ব্যানারে আজ মানববন্ধনে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। দলীয় ব্যানারে হওয়ার কারণে সেখানে তিনি ২ মিনিটের মত অবস্থান করেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তবে অধ্যক্ষকে মারধরের বিষয়ে তিনি দু:খ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মহসিন রেজা জানান, তিনি মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন না। মাহমুদকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বলির পাঠা হয়েছে অধ্যক্ষ মাসুদ। প্রতি‌ক্রিয়া জান‌তে চাই‌লে তি‌নি কল সং‌যোগ কে‌টে দেন।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত কুমার অধিকারী বলেন, বাহারুলের কর্মকান্ডে দল আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অধ্যক্ষকে মারধর করে সে ভাল কাজ করেনি। তিনি চেয়ারম্যানের অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য নিন্দা জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থানা থেকে কোন অভিযোগ আসলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে কয়রা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম। ২০০২ সালে কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী ও একই বছরে কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হন। এরপর ২০০৩ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য হন। ২০০৭ সালে ছাত্রলীগ খুলনা জেলা শাখার সদস্য, ২০১০ সালে কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলকে অপব্যবহার করে শুরু করেন উশৃঙ্খল জীবন।

কয়রা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনীত হওয়ার আগে এস এম বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে উপজেলায় বেশ কয়েকটি ঘের দখলের অভিযোগ ছিল। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বাহারুল প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন। হামলায় তৎকলীন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও সদস্য হারুনার রশিদ আহত হন।

প্রেসক্লাবের সে সময়ের সভাপতি মোস্তফা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে বাহারুল তৎকালীন ৬৫ টি ঘের দখল করেন। সাংবাদিকদের মারধরের বিষয়টি আমি তৎকালীন এমপিকে অবগত করেছিলাম। কিন্তু তিনি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ঐ সময় ২১ দিন প্রেসক্লাব বন্ধ ছিল।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!